ভারতে তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চে রুল শনানির আবেদন করলে আদালত এই দিন ঠিক করে দেয়।
এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, “পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি হাই কোর্টে উপস্থাপন করা হয়েছে। পরে এ বিষয়ে আদালত বলেছে- অর্থপাচারকারী দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
“আদালত আরও বলেন যে যতবড় রাঘব বোয়াল হোক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে এ ঘটনায় (গ্রেপ্তার) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আদালত।”
আদালতের বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, “পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে হাই কোর্ট বলেছে- আমাদের মেসেজ ক্লিয়ার, দুর্নীতি ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স। কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অর্থপাচারকারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীদের ব্যাপারে আমরা খুবই সিরিয়াস।”
দুদকের পক্ষে ছিলেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কিংবা গ্রেপ্তারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট। দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ও ঢাকা জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
পি কে হালদারকে কীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে?
ভারত জানালেই পি কে হালদারকে আনার বিষয়ে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
‘বেনাপোল দিয়ে ২০১৯ সালেই’ দেশ ছাড়েন পি কে হালদার
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক চলতি বছর জানুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পরেন, সেজন্য ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক। ডাকযোগে পাঠানো সেই চিঠি এসবি পায় ২৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়। পরে এসবি সে চিঠি দেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে দায়িত্বপালনকারী ইমিগ্রেশন ইউনিটকে পাঠায়।
“ইমিগ্রেশন ইউনিট ওইদিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সেই নির্দেশনা পায়। কিন্তু তার ঘণ্টা দুই আগে বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পি কে হালদার দেশ ছেড়ে যান।”
গুঞ্জন ছিল, পি কে হালদার কানাডায় গিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করছেন। কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরদিন তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পি কে হালদারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু জানায়নি। ভারত এ ব্যাপারে জানালেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে ফেরানোর চেষ্টা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে ইংগিত মিলেছে সরকারের তরফ থেকে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। ইতোমধ্যে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করা হয়েছে।
পি কে হালদারকে ফেরানোর পদক্ষেপ জানতে চায় হাই কোর্ট
পি কে হালদারের জের টানছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো
পি কে হালদারকে ধরে আনতে ‘ইন্টারপোলে যাচ্ছে’ দুদক
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে পি কে হালদার পুঁজিবাজার থেকে বিভিন্ন নামে শেয়ার কিনে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) মালিকানায় এসেছিলেন। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।
আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে ২০১৯ সালের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে। বিদেশে থাকা পিকে হালদার ২০২০ সালের ২৮ জুন আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তার দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।
আদালত তাতে অনুমতি দিলেও পিকে হালদার না ফেরায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ হয়। ঢাকার জজ আদালত পি কে হালদারের সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেয়। এছাড়া পলাতক অবস্থায় তার বক্তব্য বা সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট।