তার বিরুদ্ধে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লোপাটর অভিযোগ তদন্ত করছে
দুদক। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকার তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা
এই অর্থ জব্দ করেছে দুদক।
বাংলাদেশ ব্যাংকও তদন্ত করছে। সব তদন্ত শেষে ধারণা পাওয়া যেতে পারে,
পি কে হালদার আসলে কত টাকা পাচার করেছেন।
কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে দুই বছর আগে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার
(পি কে হালদার) শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়েন।
সেখানেও তার ও সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে অভিযানে নেমে ভারতের কেন্দ্রীয়
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেপ্তার করে এই
বাংলাদেশিকে।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার রিলায়েন্স
ফাইন্যান্স লিমিটেডেও একই পদ সামলেছিলেন।
এছাড়াও তিনি নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা
লোপাট করে পালান বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে পি কে হালদার পুঁজিবাজার থেকে ভিন্ন
নামে শেয়ার কিনে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড
ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) মালিকানায় এসেছিলেন।
এসব প্রতিষ্ঠানের সবগুলোর আর্থিক সূচক নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে কয়েক বছর
ধরেই। আমানত ফেরত দিতে না পারা, মূলধন সঙ্কট, খেলাপি ঋণে লোকসান গুনছে এগুলো।
পি কে হালদার সংশ্লিষ্টতার বদনাম ঘোচাতে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড
নাম বদলে হয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেড। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকও নাম বদলে হয়েছে গ্লোবাল
ইসলামী ব্যাংক।
তিন দিনের রিমান্ডে পি কে হালদার
ফাস ফ্যাইন্যান্স
পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির পর থেকেই ক্রমাগত লোকসানে ডুবছে ফাস
(এফএএস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) জমা দেওয়া কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সাল থেকেই লোকসান গুনে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৯ সালে এর লোকসান ছিল ১৫০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে
২১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ
করেনি।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় বাংলাদেশ
ব্যাংকের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন
ফাস ফাইন্যান্সের কোম্পানি সচিব জাহিদ মাহমুদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী
জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। বহিঃনিরীক্ষক এখন
নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নিরীক্ষা সম্পন্ন হলেই ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
করা হবে।”
পিপলস লিজিং
পি কে হালদারের কেলেঙ্কারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়া পিপলস লিজিং
অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত দেয় হাই কোর্ট।
পরে আমানতকারীদের দাবিতে কোম্পানিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আদালতের
নির্দেশে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে নতুন পর্ষদ প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের
কাজ করছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের পর থেকে আর্থিক কোনো
তথ্য প্রকাশ করেনি।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি
২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার মুনাফা করেছিল।
এর আগে ২০১৬ সালে লোকসান দিয়েছিল ৯৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তারও আগে ২০১৫
সালে লোকসান দিয়েছিল ৮৩ কোটি ৯৬ লাভখ টাকা।
২০১৮ সাল থেকে কোনো তথ্য দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পুনর্গঠনের অপেক্ষায়
থাকা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেনও স্থগিত রয়েছে পুঁজিবাজারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় পিপলস লিজিংয়ের কোম্পানি সচিব
(সহকারী ব্যবস্থাপক) এ কে এম আবু জাফর বলেন, “পিপলস
লিজিংয়ের সব কার্যক্রম এখন প্রায় বন্ধই রয়েছে। সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে ১০ জন পরিচালক
নিয়োগ দেওয়া হয় ছয় মাস পূর্বে।”
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (আইএলএফএস) সাবেক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক।
ডিএসইকে দেওয়া কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে
কোম্পানিটি লোকসান গুনেছে ৬৯৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে লোকসান দিয়েছে ২
হাজার ৮০২ কোটি টাকা।
২০২০ সালে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৩১ টাকা ৩০ পয়সা। এর আগের বছরে
দিয়েছে ১২৬ টাকা ৩৬ পয়সায়।
বিআইএফসি
শেয়ার কেনার মাধ্যমে দখলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স
কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) এ চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় পি কে হালদারের ভাই প্রীতিশ
কুমার হালদারকে। সেই সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয় তাদের নিকটাত্মীয়দের।
ঋণ জালিয়াতির কারণে ২০১৬ সালে বিআইএফসির পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই প্রতিষ্ঠানটিও লোকসান গুনছে ২০১৫ সাল থেকে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে লোকসান
দিয়েছে ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন
প্রকাশ করেনি।
কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনিরীক্ষিত তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য দিয়েছে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে। সেখানে ওই তৃতীয় প্রান্তিকে ৪৮ কোটি টাকা লোকসানের উল্লেখ রয়েছে।
বিআইএফসির কোম্পানি সচিব মো. আহসান উল্ল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, ‘বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘায়িত হওয়ায়
এবং আদালতের রুলের কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা করা সম্ভব হয়নি। ২০১৯ সালের
জুন মাসের ৩০ তারিখে এজিএম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাও হয়নি; দুই দফা তারিখ নির্ধারণ
করেও এজিএম হয়নি। আবার করোনা মহামারীর জন্যও কিছুটা দেরি হয়েছে।
“২০১৮, ২০১৯, ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন
তৈরি হলেও তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না এজিএম না হওয়ায়। আদালতের আদেশ মেনেই সময়ে সময়ে প্রতিষ্ঠান
সম্পর্কে জানানো হয়। এজিএম করতে পারলেই ২০২১ সালের জন্য নিরীক্ষিত হিসাব দেওয়া যাবে।”
আর এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা জানতে আদালতের নির্দেশে ‘ফ্যাক্ট
ফাইন্ডিংস কমিটি’ গঠন করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের
ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানের নেতৃত্বে।
এই কমিটি পিপলস লিজিং ও বিআইএফসির বিষয়ে তদন্ত এখনও গুছিয়ে আনতে পারেনি
বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। অন্য দুটির বিষয়ে তদন্ত শেষের পর্যায়ে রয়েছে।
এখন পর্যন্ত দুদকের দায়ের করা মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ভুয়া
ঋণ সৃষ্টি ও আত্মসাতের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা, এফএএস থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি
টাকা, পিপলস লিজিং থেকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার
কথা বলা হয়েছে।
এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা অর্থ ফেরত নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তার
মধ্যে রয়েছে।
যেসব ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ দেখিয়ে ঋণ ছাড়
দুদকের তদন্তে বেশ কিছু কাগুজে প্রতিষ্ঠানের তথ্য মেলে, যেগুলোর নামে
ঋণ নিয়ে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, এস
এ এন্টারপ্রাইজ, সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, নেচার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, উইনটেল ইন্টারন্যাশনাল
লিমিটেড, বর্ণ, সন্দ্বীপ করপোরেশন, আনান কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড, অ্যান্ডবি
ট্রেডিং, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দেয়া শিপিং লিমিটেড, ইমার এন্টারপ্রাইজ, জি অ্যান্ড জি
এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, মেরিনট্রাস্ট লিমিটেড,
মুন এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন লিমিটেড ও পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
পি কে হালদারের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ
পি কে হালদার এখন দেশে ‘ফিরছেন না’
পি কে হালদার এখন দেশে ‘ফিরছেন না’
পি কে হালদারের ‘সহযোগী’ অবন্তিকা গ্রেপ্তার
পি কে হালদারের ‘৬২ সহযোগীর’ খোঁজ পেয়েছে দুদক
পি কে হালদারের ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা
আরও মামলা হচ্ছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে
সবকটি মামলায় ১ নম্বরে পি কে
হালদার
২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
পায় দুদক।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল
) গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত চেয়ে অভিযোগ করতে থাকলে অনুসন্ধানে নামে তারা।
আইএলএফএসএল কেলেঙ্কারি খতিয়ে
দেখতে কমিশনের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি
অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে আলাদাভাবে অনুসন্ধানের জন্য দুদক দায়িত্ব দেয় আরেক
উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানকে।
এর মধ্যেই ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দেশ ছেড়ে পগারপার হন পি কে হালদার।
তাকে ঠেকাতে না পারার কারণে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে
পৌনে ৩০০ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রথম মামলা করে দুদক।
সেই মামলায় গত বছরের নভেম্বরে আদালতে অভিযাগপত্র দাখিল করা হয়। তাতে
তার বিরুদ্ধে ৪২৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
পাশাপাশি পি কে হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার ৮০ কোটি
টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুদকের তদন্তে উল্লেখ রয়েছে।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে
তদন্ত শেষে কেবল জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দুদক
কর্মকর্তারা জানান, আরও তিনটি মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি
তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের
অভিযোগে আরও বেশ কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
দায়ের হওয়া ৩৪টি মামলার মধ্যে সবগুলোতে পি কে হালদারকে প্রধান করা হয়েছে।
তার স্বজন ও সহযোগীসহ এসব মামলার আসামি ৬৪ জন। তাদের মধ্যে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত
আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক।
এসব মামলায় ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ও আসামিসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
৩৪ মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল
সার্ভিসেস সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, পি কে হালদারসহ
নয় বোর্ড সদস্য, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, এফএএস ফাইন্যান্সের
সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, এমডি রাসেল শাহরিয়ার।
এছাড়া হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারির অভিযোগের অনুসন্ধানের মধ্যে গত বছরের
জানুয়ারিতে পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর
এস কে সুর চৌধুরী, সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খানসহ ২৫
জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় উচ্চ আদালত।
অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিচারিক আদালত
থেকে আদেশ পেয়েছে দুদক।
এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলম
পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত মার্চে সাবেক ডেপুটি গভর্নর
এস কে সুর চৌধুরী ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক।
আর পি কে হালদারের মা লীলাবতী, স্ত্রী সুস্মিতা সাহা ও ভাই প্রীতিশ কুমার
হালদার আগেই ভারতে পাড়ি জমান।
পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তার নামে
রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ৪৫০ শতক জমির সন্ধান পায় দুদক।
এছাড়া ধানমণ্ডিতে দুটি ফ্ল্যাট, উত্তরায় একটি ১০ তলা ভবন, গ্রিন রোড,
উত্তরা, দিয়াবাড়ি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল জমি থাকার
প্রমাণ পায় দুদক। পরে গত বছরের মার্চে দুদকের আবেদনে এসব সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দেয়
আদালত।
দুদকের মামলায় পি কে হালদারসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা
এস কে সুর, শাহ আলম গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন: হাই কোর্ট
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন এস কে সুর ও শাহ আলম
পিপলস লিজিং: ‘দায় এড়াতে পারে না’ বাংলাদেশ ব্যাংক
পি কে হালদারের ৪৫০ শতক জমি ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দ
পিরোজপুর থেকে উঠে এসে বড় কেলেঙ্কারিতে
পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। তার
বাবা প্রণবেন্দু হালদার (প্রয়াত) ছিলেন নাজিরপুর স্থানীয় বাজারের দর্জি এবং মা লীলাবতী
হালদার ছিলেন স্কুলশিক্ষক।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি
ও বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বুয়েটে ভর্তি হন পি কে হালদার।
প্রকৌশল শিক্ষায় ডিগ্রি নেওয়ার পর এমবিএ করে নামেন চাকরির বাজারে। এর মধ্যে চার্টার্ড
ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সম্পন্ন করেন তিনি।
দুদকের তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে কিছুদিন একটি পাটকল কোম্পানিতে চাকরি
করেছিলেন পি কে হালদার। সেখান থেকে যোগ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে। ২০০৮ সাল
পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন।
২০০৯ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হন পি কে হালদার। ২০১৫ সালের
জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন তিনি।
প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের পি কে হালদার ও তার ভাই প্রীতিশ
কুমার হালদার মিলে ট্রিপ টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর কার্যালয়
করা হয় কলকাতায়। এর আগে ২০১৪ সালে কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি
খোলেন তারা।
ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন পি কে হালদারকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি
দাঁড় করানোর আশা করছে দুদক।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি মো. খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে
বলেন, “আমরা চাই তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে
এনে আদালতে সোপর্দ করতে। আর সেটা করতে হবে ২০১৩ সালের ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ
চুক্তি অনুযায়ী।”
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন রোববার সাংবাদিকদের
বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধেই ভারতের
পশ্চিমবঙ্গের সরকার পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা
সংস্থা তাদের জানিয়েছিল অর্থপাচারের সাথে জড়িত ব্যক্তি সেখানে অবস্থান করছেন।
“সে তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন
তাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে তার বিরুদ্ধে যে মামলা বিচারাধীন সেই মামলায় বিচারের সম্মুখীন
করা হবে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন বলেন, “আমাদের
যে বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। চুক্তির আলোকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। তাকে নিয়ে আসার
জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
পি কে হালদারকে কীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে?
ভারত জানালেই পি কে হালদারকে আনার বিষয়ে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী