এ
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে সেগুলোর মেয়াদকালীন সময়ে
মোট প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরিত
হবে, যা বাংলাদেশের পাঁচ বছরেরও বেশি জাতীয় নির্গমনের সমান।
সোমবার
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশবাদী সংগঠন মার্কেট ফোর্সেস,
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ
করে।
‘চট্টগ্রাম
অঞ্চলে জ্বালানি পরিকল্পনা: সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য
অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেস এর নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান
ভিনসেন্ট।
প্রতিবেদনে
বলা হয়, চলতি দশকে চট্টগ্রামে ২০ গিগাওয়াট কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের
পরিকল্পনা চলছে। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ গিগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর পাশাপাশি
মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। যেহেতু প্রকল্পগুলো এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক,
সেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
“প্রস্তাবিত
পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের মোট জীবাশ্ম জ্বালানির দুই তৃতীয়াংশই পুড়বে
চট্টগ্রামে; যা জলবায়ুর উপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে। এসব প্রকল্প নৈসর্গিক চট্টগ্রামের
প্রাণ-প্রকৃতির ওপর যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তেমনি স্থানীয় জনসাধারণের জীবন-জীবিকা
ও স্বাস্থ্যের জন্যও ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপর্যয়।”
ফাইল ছবি
জীবাশ্ম
জ্বালানি প্রকল্পের এ বিশাল সম্প্রসারণ প্রধানত জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো
নির্মিত ও অর্থায়ন করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, মাতারবাড়ী-২ কয়লাভিত্তিক
বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।
প্রতিবেদনে
প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট
উৎপাদন ক্ষমতার মাতারবাড়ি-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চিহ্নিত করা হয়। এ প্রকল্পে সবচেয়ে
বেশি অর্থায়ন করছে জাপানি কোম্পানিগুলো।
এ
জন্য প্রধান অর্থায়নকারী হিসেবে দেশটি নিজেদের অঙ্গীকার ‘সরাসরি ভঙ্গ করছে’ বলে প্রতিবেদনে
অভিযোগ করা হয়।
“জাপান
ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোর উচিৎ বাংলাদেশকে পরিবেশ দূষণকারী প্রযুক্তি
গছিয়ে না দিয়ে সাশ্রয়ী, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশটির প্রয়োজনীয়
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সহায়তা করা।”
প্রতিবেদনে
দাবি করা হয়, “মাতারবাড়ি-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইতোমধ্যে স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধন
করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনা নির্মাণের জন্য সাধারণ মানুষকে তাদের বসতবাড়ি থেকে
উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তারা তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছে। নির্মিত হলে মাতারবাড়ির
দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ প্রায় ৬,৭০০ জন মানুষের অকাল মৃত্যু ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা
করা হচ্ছে।”
ফাইল ছবি
কয়লা
ও গ্যাসভিত্তিক বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে বাংলাদেশে ‘আর্থিক ঝুঁকি’ নেমে আসবে উল্লেখ
করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতেই
বাংলাদেশের বার্ষিক খরচ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এলএনজি
থেকে প্রতি গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ হবে গড়ে ৯৬০ মিলিয়ন
মার্কিন ডলার। ফলে দেশের অর্থনীতি বেশি দামে আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে
পড়বে।“
সরকারকে
নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।
সংবাদ
সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা একদিকে বলছি বাংলাদেশ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের
সদস্য এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ
করছে। অন্যদিকে আমরা এমন ধরনের জ্বালানির দিকে যাচ্ছি, যাতে দেশে কার্বন নিঃসরণ আরও
বাড়ছে। এটা কিন্তু এক ধরনের স্ববিরোধিতা।
বাংলাদেশ
পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জন্য কৌশলগত
পরিবেশ সমীক্ষা নিশ্চিত করে সরকারকে শিল্পায়নের কাজ শুরুর আহ্বান জানান। তিনি নবায়নযোগ্য
জ্বালানিভিত্তিক শিল্পায়নেও অনুরোধ করেন।
সংবাদ
সম্মেলনে প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করেন জাপান সেন্টার ফর সাসটেইনেবল অ্যান্ড সোসাইটির
প্রোগ্রাম কো-অডিনেটর ইউকি তানবে, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী
শারমীন মুরশিদ।