সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল, গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ার ফলে কিছু স্থানে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে চাল।
এ ছাড়া সুরমা নদী উপচে সোমবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর নিচু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, “সোমবার বেলা ১২টায় সুরমা নদীর পানি সীমান্তবর্তী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
“এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সারি নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।
সোমবার সিলেটে বৃষ্টি কমলেও ঢলের কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢল কমে গেলে প্লাবনের পানি নেমে যাবে বলে আশা করছে পাউবো।
সকাল থেকে সুরমা নদী উপচে নগরীর উপশহর, সোবহানিঘাট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে।
কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সকালে এসে দেখি নদী উপচে দোকানের সামনে পানি এসে গেছে। দুপুর গড়ানোর আগেই দোকানের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। এখন পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।”
নগরীর সোবহানিঘাট এলাকার বাসিন্দা রনি ইসলাম বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসার ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।“
এদিকে উজানের ঢলে পাঁচ উপজেলার অন্তত ১৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে মাছের খামার ও বীজতলার।
জকিগঞ্জ উপজেলায় শনিবার রাতে সুরমা নদী রক্ষা ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ফলে তলিয়ে গেছে উপজেলার বারহাল ও মানিকপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া কাজলসার ইউনিয়নের কিছু এলাকায়ও পানি প্রবেশ করেছে।
বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ বলেন, “ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, চকবারাকুলি, শরীফাবাদ, শাহগলী বাজার ও কচুয়ায় সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর বোরো ধান। বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।“
এদিকে কোম্পানীগঞ্জেও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে পানি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, উপজেলায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ১২ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণ শুরু হয়েছে।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কানাইঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। পানি ঢুকেছে কানাইঘাট বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও।
এ ছাড়া কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কানাইঘাটের ইউএনও সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, “বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসন থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারিভাবে বন্যা কবলিত এলাকার জন্য ১৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।“
সিলেট জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “বন্যায় পাঁচটি উপজেলার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় বন্যাকবলিতদের জন্য এরই মধ্যে ১০৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে রোববার থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে। তবে উজানে বৃষ্টি হচ্ছে, এ কারণে ঢল নামছে। ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।