ক্যাটাগরি

অনলাইন গুপ্তচর শনাক্তে নতুন ব্রিটিশ অ্যাপ

লিংকডইন ও ফেইসবুকের মতো সামাজিক সাইটে
ভুয়া প্রোফাইলের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার ব্রিটিশ নাগরিককে লক্ষ্য করার কথা জানিয়েছে
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ‘এমআই৫’।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনলাইনে
বিভিন্ন ধরনের ‘প্রলোভন দেখিয়ে’ মানুষের কাছ থেকে ‘স্পর্শকাতর তথ্য’ হাতিয়ে নিচ্ছে
এসব গুপ্তচর। অনলাইন জগতে এই ধরনের ঘটনা বড় পরিসরে এবং নিয়মিতই ঘটছে।

সম্পর্ক তৈরি

এসব গুপ্তচর কীভাবে অনলাইন ব্যবহারকারীদের
স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে, কিছু ‘কেইস স্টাডি’র সিরিজে সেই পরিস্থিতি তুলে ধরেছে
যুক্তরাজ্য সরকার।

এসব ‘কেইস স্টাডি’র একটিতে দেখা যায়,
একজন সাবেক নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারী কর্মীকে অনলাইনে একটি পেশাদার নেটওয়ার্কিং সাইটের
মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাকে বিদেশে দেখা করতে বলে গুপ্তচররা।

ছয় মাসের মধ্যেই, গুপ্তচর তাকে একটি
‘গোপন যোগাযোগ ব্যবস্থা’ প্রদান করে এবং তার কাছ থেকে বিভিন্ন স্পর্শকাতর সরকারী তথ্য
জানতে চায়।

অনলাইনে বিদেশী গুপ্তচরদের চলমান হুমকির একটি উদাহরণ হিসেবে ঘটনাটিকে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

আরেকটি উদাহরণ হিসেবে, গুপ্তচররা একটি ‘থিংক ট্যাংক’-এর সদস্য সেজে
দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারী কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

যেহেতু প্রোফাইলটিতে সেই কর্মীর একজন ‘পরিচিত বন্ধু’ ছিলেন, তাই কিছুটা
সন্দেহ থাকার পরও প্রোফাইলটিকে আসল হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি। যা তাদের মধ্যে একাধিক
‘মেসেজ চালাচালি’, এমনকি ব্যবসায়িক পরামর্শ দেওয়া পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির
প্রতিবেদনে।

“যারা সরকারের সঙ্গে কাজ করছে, তাদের সঙ্গে উচ্চ-প্রযুক্তির ব্যবসায়িক
এবং শিক্ষাভিত্তিক সম্পর্ক তৈরিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বিদেশী গুপ্তচররা।” –বলেছেন
এমআই৫-এর মহাপরিচালক কেন ম্যাকক্যালাম।

“দ্য থিংক বিফোর ইউ লিংক’ অ্যাপটি তাদের সাহায্য করবে, যাদের সঙ্গে
হয়ত ছদ্মবেশে যোগাযোগ চলছে। অনলাইনে কোনো অপরিচিত যোগাযোগ গ্রহনের আগে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে
সাহায্য করবে অ্যাপটি।”

সরাসরি উল্লেখ না করলেও, এই ধরনের কার্যক্রমের পেছনে বেশিরভাগ সময় চীনের
ভূমিকা থাকে বলে প্রতিবেদেনে লিখেছে বিবিসি।

প্রাথমিকভাবে, সরকারী কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের
কথা চিন্তা করে অ্যাপটি তৈরি হয়েছিল। তবে, মঙ্গলবার থেকে সবাই বিনামূল্যেই অ্যাপটি
ডাউলোড করতে পারবেন।

চাটুকারিতার
মাধ্যমে প্রতারণা

মনোবিজ্ঞানীদের সহায়তায় নকশা করা এই অ্যাপ, বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে
নির্ণয় করতে সাহায্য করে, ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাওয়া প্রোফাইল ভুয়া কি
না।

এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে ‘চাটুকারিতার মাধ্যমে যোগাযোগ’ অথবা এমন কোনো
‘ভালো প্রস্তাবনা’, যেটি ‘মিথ্যা হওয়ার’ সম্ভাবনাই বেশি।

অ্যাপটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী বিভিন্ন
পুরস্কার ও সার্টিফিকেট আয় করতে পারবেন, যা তাদের নিরাপত্তা দলের সঙ্গেও ভাগাভাগি করা
যাবে।

ভুয়া পরিচয় তৈরিতে সাধারণত অন্যান্য সাইটের ছবি ব্যবহার করে গুপ্তচররা।
তাই, অন্যান্য সাইট থেকে ব্যবহৃত ছবি চিহ্নিত করতে, অ্যাপে একটি ‘ইনবিল্ট’ ছবি সার্চের
সুবিধা রয়েছে।

ভবিষ্যতে এসব ভুয়া প্রোফাইল শনাক্ত করা আরও কঠিন হতে পারে। কারণ, নতুন
পরিচয় তৈরিতে ‘এআই’ এবং শক্তিশালী ‘ডিপ ফেইক’ করতে পারে এসব গুপ্তচর।

‘সেন্টার ফর প্রটেকশন অফ ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার
(সিপিএনআই)’-এর ‘থিংক বিফোর ইউ লিংক’ প্রচারণার সর্বশেষ পদক্ষেপ নতুন এই অ্যাপ।

এসব ভুয়া প্রোফাইল বাণিজ্যিকভাবেই তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভ বার্কলে।

“তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমরা যেন নিজেদের এবং তথ্য রক্ষা করতে
যথাসাধ্য চেষ্টা করি।” –বলেছেন তিনি।

“অনলাইনে কারো সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে, তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হতে
হবে। সেই ক্ষেত্রে, নতুন অ্যাপটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘টুল’ হিসেবে কাজ করবে।”