শ্রীলঙ্কার
বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তামিম ইকবাল। তার টেস্ট
ক্যারিয়ারের এটি দশম সেঞ্চুরি।
এবারের
আগে সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি ১৬ ইনিংস আগে। তার মাপের ব্যাটসম্যানের জন্য খুব
আদর্শ নয়, তবে সাধারণ হিসেবে খুব বড় কোনো বিরতি পড়েনি মাঝে। তারপরও এই সেঞ্চুরি তার
কাছে কাঙ্ক্ষিত হতে পারে দুটি কারণে।
প্রথমত,
ইনিংস খুব বেশি না খেললেও সময় গড়িয়েছে অনেক। সবশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তার তিন বছরেরও
বেশি সময় আগে। এরপর কোভিড বিরতি, নিজের চোট-বিশ্রাম-ছুটি মিলিয়ে কিছু টেস্টে তিনি খেলতে
পারেননি। ম্যাচ খুব বেশি না গেলেও সময় তো কম গড়ায়নি!
দ্বিতীয়ত,
এই ১৬ ইনিংসে সেঞ্চুরির হাতছানি তার ছিল বেশ কবার। এই সময়ে দুইবার আউট হয়েছেন ৯০ ছুঁয়ে।
৭০ ছোঁয়া ইনিংস আছে আরও তিনটি। তামিমের ভেতর তাই তিন অঙ্কের তাড়না তীব্র হচ্ছিল নিশ্চয়ই।
এবার
তিনি মেটালেন সেই তিয়াস। নিজের ঘরের মাঠ, দারুণ ব্যাটিং উইকেট, প্রতিপক্ষের গড়পড়তা
বোলিং-সবকিছুই তৈরি করে দিয়েছিল উপযুক্ত মঞ্চ। তবে সবকিছু পক্ষে পেলেও তো নিজের কাজটা
করতে হয় ঠিকঠাক। তামিম তা করলেন দারুণভাবেই।
ইনিংসের
ভিত গড়েন তিনি আগের দিন বিকেলে। শুরুতে যদিও একটু নড়বড়ে ছিলেন। দ্বিতীয় ওভারেই স্লিপে
ক্যাচ দিয়েছিলেন আলগা শটে। তবে ফিল্ডার ধরতে পারেননি, বলটিও ছিল ‘নো।’ শুরুর জড়তা অবশ্য
দ্রুতই ঝেড়ে ফেলেন ব্যাটের ঝলকানিতে। দিন শেষ করেন ৫২ বলে ৩৫ রান নিয়ে।
তৃতীয়
দিনে শুরু করেন সেখান থেকেই। যেন থিতু হয়েই নামেন মাঠে। দ্বিতীয় ওভারেই বিশ্ব ফার্নান্দোকে
বাউন্ডারি মারেন টানা দুই বলে। স্পিন আক্রমণে আসার পর রমেশ মেন্ডিসকেও মারেন জোড়া বাউন্ডারি।
এই অফ স্পিনারকেই আরেকটি চার মেরে পা রাখেন ফিফটিতে।
ফিফটির
পরও প্রায় নিখুঁত ব্যাটিংয়ে ছুটতে থাকেন। লাঞ্চ বিরতিতে যান ৮৯ রান নিয়ে। লাঞ্চের পর
দ্বিতীয় ওভারেই হারান তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী মাহমুদুল হাসান জয়কে। তবে তামিমের মনোযোগে
চিড় ধরেনি। তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি ১৬২ বলে।
বল সংখ্যা
দেখে বোঝা কঠিন কতটা দাপট ছিল তার ব্যাটিংয়ে। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হয়তো সেঞ্চুরিতে
পৌঁছাননি, তবে তার নিয়ন্ত্রণ ছিল পুরোপুরি, ভুগতে হয়নি একটুও।
বাংলাদেশের
দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০ সেঞ্চুরি পূর্ণ হলো তার। দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি হলো ৬টি।
এর মধ্যে আগে একটি ছিল চট্টগ্রামে, ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
শ্রীলঙ্কার
বিপক্ষে আগের ১১ টেস্টে ২২ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। গত বছরই শ্রীলঙ্কা সফরে
পাল্লেকেলেতে পরপর দুই টেস্টে আউট হন ৯০ ও ৯২ রানে। এবার সেই শূন্যতা মেটালেন তিনি।
সেঞ্চুরির
পরপরই রমেশ মেন্ডিসের বলে তাকে কট বিহাইন্ড দেন আম্পায়ার। তবে রক্ষা পান রিভিউ নিয়ে।
একটু পর প্রচণ্ড গরমে ডান হাতে ক্র্যাম্প নিয়ে ভুগতে হয় তাকে। তাতে ছন্দও ব্যহত হয়
খানিকটা। তবে হাল না ছেড়ে লড়াই চালিয়ে যান। চা বিরতিতে যান ১৩৩ রান নিয়ে।
বিরতির
পর অবশ্য আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি। হয়তো ক্র্যাম্পের কারণেই। আরেকটি মাইলফলক ছুঁতে
তাই অপেক্ষা বাড়বে আরেকটু। ৫ হাজার টেস্ট রান ছুঁতে তার প্রয়োজন আর স্রেফ ১৯ রান।