সন্তানের হাতে চিপস, চকোলেট কিংবা পুতুলসহ নানা খেলনা তো হরহামেশাই আমরা তুলে দিই। কিন্তু জীবন ও জগৎ বিষয়ে জ্ঞান কি তাকে কখনও দিই?
নিজের বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমনই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন লেখক। প্রকৃতির রহস্যভাণ্ডারের চাবি হচ্ছে বিজ্ঞান। অথচ বিজ্ঞান শেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ যেন কমে যাচ্ছে। ছেলেবেলায় আমরা যতটুকু বিজ্ঞান শেখার বিষয়ে আগ্রহী ছিলাম, এখন এরকম আগ্রহ কারও মধ্যে আছে এটা অন্তত আমার চোখে পড়ে না।
আমরা যারা বড় হয়ে গেছি বা যাদের গড়ে উঠার আর তেমন কোন সুযোগ নেই, তাদের কথা বাদই দিলাম। আমাদের শিশুরা, যারা বেড়ে উঠছে, গড়ে উঠছে, তাদের মধ্যে বিজ্ঞান শিখার কোন মনোভাবই আমরা তৈরি করতে পারিনি। আমাদের ব্যর্থতা তাদের আমরা শিখাচ্ছি, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হবে আর টাকা রোজগার করতে হবে।
আমরা তাও যা পাঠ্যসূচির বাইরে দু’একটা বই পড়তাম, এখনকার শিশু-কিশোররা পড়ার চাপে সেটাও পারে না। তাতেও সমস্যা ছিল না যদি পাঠ্যবই পড়ে কিছু বুঝা যেত বা শেখা যেত, আনন্দ পাওয়া যেত।
স্কুল পাঠ্যপুস্তকে বিজ্ঞান হিসেবে যা পড়ানো হচ্ছে, তা পড়ে কি শিশু-কিশোররা কিছু শিখতে পারছে? আমার তা মনে হয় না। কারণ, সেসব খুব গতানুগতিক, আবার কঠিনও। আর যা পড়ানো হয় তা কি কোমলমতি খুদে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে? নাকি মুখস্ত করে পরীক্ষায় খাতায় উগরে দিয়ে আসে? আনন্দের ভেতর দিয়ে তাদের কাছে বিজ্ঞানের পাঠ পৌঁছে দিতে পারছে কি পাঠ্যবই?
পারছে না বলেই হয়তো একজন সাহিত্যিককে ছোটদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বই লিখতে হয়। আবু তাহের সরফরাজের পদার্থবিজ্ঞান বইটির কথাই বলছি। ২০২২ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ‘ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান। বইটি তিনি কেন লিখলেন? সে বিষয়টি জানতে হলে বইয়ের ভূমিকার কিছু অংশ পড়ে নেওয়া দরকার।
‘ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান’ লেখার অনুপ্রেরণা পাই কন্যা ছায়াবীথি শ্যামলিমাকে চতুর্থ শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি পড়াতে গিয়ে। দেখি যে, লেখাগুলো সাবলীল নয়। ছায়াবীথি সহজভাবে ও আনন্দের সঙ্গে পাঠ বুঝতে পারছে না। ঝামেলায় পড়ে যাই। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বইগুলো কয়েকদিন পড়লাম। প্রতিটি শ্রেণিতে পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ একটু একটু করে দেওয়া। আমার ভাবনায় এলো, পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ প্রতিটি শ্রেণির বইতে না দিয়ে একটাই বই যদি হতো! বইটার নাম হতে পারত, ‘ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান’। আবার, প্রতিটি শ্রেণিতে জীববিষয়ক পাঠ না দিয়ে ‘ছোটদের জীববিজ্ঞান’ নামে বই যদি করা যেত!
এইভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান বইতে বিজ্ঞানের যত শাখা পড়ানো হয়, সেই শাখাগুলোর আলাদা আলাদা বই যদি করা হয়, কেমন হতো? তাহলে, বিজ্ঞান বইটাই আর থাকতো না। বদলে এক একটি বিজ্ঞান বিষয়ের এক একটি বই। জানি যে, রাষ্ট্রীয় শিক্ষাব্যবস্থায় এরকমটা কখনও হবে না। না হলেও ক্ষতি নেই। পদার্থবিজ্ঞানের তথ্যগুলো একসঙ্গে করে সহজ ও সাবলীল ভাষায় ছোটদের উপযোগী পদার্থজ্ঞিানের একটা বই তো লেখাই যায়। এতে খুদে শিক্ষার্থীদের সুবিধেই হবে।
জগৎকে বুঝতে হলে ১১৮টি মৌলিক পদার্থ বিষয়ে মোটামুটি ধারণা থাকতে হবে। সরফরাজ তার বইতে সে বিষয়েও ছোটদের উপযোগী ভাষায় ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছেন।
স্কুলের বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকের পদার্থ বিষয়ক পাঠ বুঝতে এই বইটি খুদে শিক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়ক হবে বলে আশা করি। মুখস্থ করে নয়, পদার্থ বিষয়ক পাঠ সহজভাবে জেনে ও বুঝেই তারা স্কুল পরীক্ষায় লিখে দিয়ে আসতে পারবে। বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে পদার্থের গঠন, চরিত্র, ধর্ম, পরমাণুর নিউক্লীয় বল পর্যন্ত অবস্থা, আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয়তা, প্রতীক ও যোজ্যতা।
ধারণা দেওয়া হয়েছে পারমাণবিক বল, ভর, সংখ্যা ও শক্তি সম্বন্ধে। এই পাঠ পদার্থবিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ, যা সাধারণত স্কুলপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। পদার্থবিজ্ঞানের বিস্তৃত পাঠ নেওয়ার বয়স খুদে পাঠকের নয়। এজন্য বিস্তৃত পরিসরে পদার্থবিজ্ঞানের আলোচনা বইটিতে নেই। তবে পদার্থবিজ্ঞানকে ভালোভাবে বুঝতে ও জানতে তাদের কৌতূহলকে উসকে দেওয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে বইটিতে ১১৮টি মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য, জৈবিক ভূমিকা, উৎস, ব্যবহার ও আইসোটোপ বর্ণনা করা হয়েছে। মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র প্রতি মুহূর্তে আমরা ব্যবহার করে চলেছি, অথচ ওই সব পদার্থ বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। বইটি পাঠে খুদে শিক্ষার্থীদের সেই জানাটাও হয়ে যাবে।
কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |