ক্যাটাগরি

শৃঙ্খলার ক্যানভাসে নিয়ন্ত্রণের তুলিতে আঁকা ইনিংস তামিমের

মূলত ব্যাটিংয়ের ধরনেই মিলটা খুঁজে পেয়েছেন সিডন্স। যেভাবে দলের ভার বয়ে নিয়ে গেছেন ম্যাথিউস, নিজের সহজাত প্রবৃত্তি সামলে সেই একই পথের পথিক হয়েছেন তামিম।

তামিম এমনিতে স্ট্রোকপ্লেয়ার, টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি পছন্দ করেন শট খেলতে। বোলারকে তিনি সাধারণত পেয়ে বসতে দেন না, বরং শট খেলে রাখতে চান চাপে। একের পর এক বাউন্ডারির ফুলে তিনি গাঁথতে চান বড় ইনিংসের মালা। ২০১৯ সাল থেকে এই টেস্টের আগ পর্যন্ত তার ফিফটি ছোঁয়া ৭ ইনিংসের ৫টিতেই স্ট্রাইক রেট ৭৫-এর বেশি। ছোট আরও কিছু ইনিংসেও শুরু করেছেন দারুণ দ্রুতগতিতে।

তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি টেস্টে তাকে দেখা গেল কিছুটা ভিন্ন চেহারায়। দারুণ সব শট তিনি খেলেছেন বটে। তবে শরীরী ভাষায় বারুদ দেখা যায়নি। চড়াও হওয়ার তাগিদ ফুটে ওঠেনি। তাড়া করার তাড়না দেখা যায়নি। জোর করে শট খেলা, তেঁড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টা করতে দেখা যায়নি একদমই। বরং আলগা বল, নিজের জোনে বল পাওয়ার অপেক্ষায় থেকেছেন। পাওয়া মাত্র তা কাজে লাগিয়েছেন।

থিতু হলে স্পিনারদের বলে বড় শট খেলতে দেখা যায় তাকে প্রায়ই। পায়ের ব্যবহার, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারার প্রবণতা থাকে অনেক। বিশেষ করে বাঁহাতি স্পিনে। অথচ এই ইনিংসে সেসব চেষ্টাই করেননি প্রায়। লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার মতো স্পিনার, যিনি পছন্দ করেন ঝুলিয়ে দিতে, তার বলেও উড়িয়ে মারা বা স্লগ করার চেষ্টা দেখা যায়নি তামিমের মধ্যে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল সেঞ্চুরির পরের ব্যাটিং। প্রচণ্ড গরমে হাতে ক্র্যাম্প করার পরও তিনি ভেঙে পড়েননি। লড়াইয়ে ক্ষান্তি দেননি। সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন নিজের ইনিংস। চেষ্টা করেননি চটকদার কিছু করতে।

তামিমের এই রূপে অভিভূত সিডন্স। তার চেয়ে ভালো তামিমকে বোঝেন কজন! সেই ২০০৮-০৯ সালের প্রতিভাবান অথচ লাগামছাড়া তামিমকে ঘষেমেজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার উপযোগী করে দিয়েছিলেন তিনিই। পরেও তিনি নানা সময়ে দূর থেকে প্রভাব রেখে গেছেন তামিমের ক্যারিয়ারে। সেই সিডন্সও তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, তিনি দেখলেন যেন নতুন এক তামিমকে।

“আজকে তামিম খুবই সুশৃঙ্খল ছিল। দ্রুত রান করার পথে ছোটেনি সে। সত্যি বলতে, তাকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের মতোই মনে হয়েছে। অনেক ধৈর্য ধরেছে, এক-দুই রান নিয়েছে অনেক। বলা যায় তার মুখে তুলে দেওয়ার পরই কেবল সে চার মেরেছে।”

“আগে তাকে যেভাবে দেখেছি, সেভাবে বোলারদের ওপর চড়াও হয়নি সে। তামিমের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত।”

ক্র্যাম্প নিয়ে লড়াই চালিয়ে চা বিরতির পর আর মাঠে নামেননি তিনি। ২১৭ বলে ১৫ চারে ১৩৩ রানে আপাতত থেমে আছে ইনিংস। ৫ হাজার টেস্ট রান থেকে তিনি আপাতত ১৯ রান দূরে।

সিডন্স জানালেন, ক্র্যাম্প ছাড়া আর কোনো সমস্যা তার নেই। সময় হলেই তাই আবার ক্রিজে গিয়ে নিজের ও দলের ইনিংস সমৃদ্ধ করবেন এই ওপেনার।

“এই প্রচণ্ড গরমে দুই দিন ফিল্ডিংয়ের পর আবার মাঠে নেমে লম্বা সময় ব্যাটিং করেছে। উইকেটে অনেক ছুটতে হয়েছে রান নিতে। এসব ভেতরের অনেকটাই শুষে নেয়। এজন্যই ক্র্যাম্প করেছে। আজ রাতে খাবার ও তরল নিয়ে, বিশ্রাম নিয়ে আশা করি সে কালকে পুরোপুরি ঠিক থাকবে।”

“আজকে তামিমের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। ২০ রান আর বাকি আছে। যে যখনই ভালো অনুভব করবে, আবার ক্রিজে ফিরে যেতে পারে।”

শৃঙ্খলায় অবশ্য খুব একটা পিছিয়ে ছিলেন না তামিমের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী মাহমুদুল হাসান জয়ও। তার অবশ্য ধরনই এমন, উইকেট আঁকড়ে রাখেন। ফিফটি পর্যন্ত তিনিও দারুণ ব্যাট করেন এ দিন। তামিমের সঙ্গে মিলে উপহার দেন ১৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি। ব্যাটিং কোচের প্রশংসা বরাদ্দ থাকল ৫৮ রান করা তরুণ ব্যাটসম্যানের জন্যও।

“জয় দারুণ ব্যাট করেছে। ইনিংস শুরু করার কাজটা কখনোই সহজ নয়। গতকাল তামিম ও জয় যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটিই ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়েছে। বেশ সফল জুটি ওদের, যদিও খুব বেশি ব্যাট করেনি একসঙ্গে। আজকে মনে হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়েছে ওরা। যে শৃঙ্খলা ওরা দেখিয়েছে, এমন কিছুই আমরা চাইছিলাম।”