বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, “বিশ্বব্যাপি
প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ ‘ডিমেনশা’তে আক্রান্ত। এই রোগে স্মৃতিশক্তি কমে, ভাষাগত
দক্ষতা কমে, পাশাপাশি মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতাও দুর্বল হতে থাকে ক্রমেই। ফলে দৈনন্দিন
জীবনের সাধারণ কাজগুলো করতেও মানুষের সমস্যা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আলৎঝাইমার’স অ্যাসোসিয়েশন’য়ের মতে, ‘ডিমেনশা’
কোনো একক রোগ নয়। হৃদরোগ বলতে যেমন হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ বোঝায়, ‘ডিমেনশা’ বলতেও
মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার সমষ্টিকে বোঝায়।
‘আলৎঝাইমার’স ডিজিজ’ও ‘ডিমেনশা’র অন্তর্ভুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্বন হেল্থ অ্যান্ড সেইন্ট মেরি’স হসপিটাল’য়ের
‘আর্জেন্ট কেয়ার মেডিকাল ডিরেক্টর অ্যান্ড ফিজিশিয়ান’ ডা. কারি উইনচেল এই বিষয়ে ‘ইটদিস
ডটকম’য়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান বিস্তারিত।
যা জানা জরুরি
ডা. কারি উইনচেল বলেন, “ডিমেনশা’ একজন মানুষের মস্তিষ্কের
ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা মানুষভেদে ভিন্ন। রোগে আক্রান্ত হলে যে বিষয়গুলো পাওয়া যায়
তার মধ্যে সাধারণ হল ‘অ্যামিলোয়েড প্লাকস’, ‘নিউরোফিব্রিলারি ট্যাঙ্গলস, দূরারোগ্য
প্রদাহ, মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যাওয়া, নিউরন মরে যাওয়া ইত্যাদি। সব
মিলিয়ে ‘ডিমেনশা’ এক ভয়ঙ্কর রোগ।”
লক্ষণ
ডা. কারি উইনচেল জানান, “ডিমেনশা’ রোগীদের পূর্ব পরিচিত
স্থান, ব্যক্তি, ঘটনা ইত্যাদি মনে করতে বেগ পেতে দেখা যায়। নিউরন ধ্বংস হয়ে যাওয়া কারণেই
এমন হয়, মস্তিষ্কে সংরক্ষিত তথ্য সঠিক সময়ে কাজে লাগানো যায় না।
কথা বলায় সমস্যা
কথার খেই হারিয়ে ফেলা, মনের কথা ব্যক্ত করার শব্দ খুঁজে
না পাওয়া ইত্যাদি ‘ডিমেনশা’ রোগীর সঙ্গে হরহামেশাই ঘটতে থাকে প্রতিদিন। মস্তিষ্কের
‘হিপোক্যাম্পাস’ আর ‘এন্টোরহিনাল’ অংশে এই তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু নিউরন নষ্ট
হয়ে যাওয়া কারণে তথ্য প্রবাহ ব্যহত হয়। ফলে শব্দ মনে পড়ে না।
সাধারণ কাজ
করতে সময় লাগা
দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলো, যা একসময় অনায়াসে করে
যেতেন, ‘ডিমেনশা’তে আক্রান্ত হলে সেই কাজ করতে অনেক সময় লাগবে। কারণ ওই কাজ সম্পন্ন
করার জন্য নিউরন পেশিতে যে সংকেত পাঠাত তা এখন আর আগের মতো করে পাঠাতে পারে না। ব্যাপারটা
অনেকটা ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকার মতো।
আবেগপ্রবণ
‘ডিমেনশা’ যদি কারও ‘সেরেব্রাল করটেক্স’য়ে আক্রমণ করে তবে
তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে। যে কোনো কাজ করার আগে একটু ভাবা প্রতিটি
মানুষের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘ডিমেনশা’ মস্তিষ্কের ওই বিশেষ অংশে আক্রমণ করলে মানুষ কোনো
কাজ করার আগে ভেবে করব, না-কি করব না- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাই ভুলে যায়, হুট করে
কিছু ঘটিয়ে বসে।”
মানুষেকে পাত্তা
না দেওয়া
ডা. উইনচেল বলেন “পরিবার বা বন্ধুরা খেয়াল করে দেখতে পারেন,
এই রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ তার নিজের কোনো কথায় সামনের মানুষটা কী মনে করলো তার ধার
ধারে না। ফলে আশপাশের মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায়।”
প্রাথমিকভাবে পরিবার বা কাছের লোকদের সঙ্গে তার সম্পর্ক
নষ্ট হতে থাকে। তবে উপরের সবগুলো লক্ষণ যদি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে তবে ধরে নিতে
হবে স্মৃতিভ্রংশ বা ‘ডিমেনশা’তে আক্রান্ত হতে চলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন
কিছু বিষয় ভুলে যাওয়া হতে পারে স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণ
কতখানি ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক?
দিনে চার থেকে ছয় কাপ চা-কফি পান স্ট্রোক ও স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমাতে পারে