বুধবার আওয়ামী লীগের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গটি তুলে তিনি রসিকতাচ্ছলে বলেছেন, “আমি মাঝে-মধ্যে বলি, এত টক টক কথা না বলে একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বার্তা বলেন। আর কত টক কথা বলবেন।”
আওয়ামী লীগের গত এক যুগের শাসনে দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার হারিয়েছেন, এমন কথা বিএনপি নেতারা হরহামেশাই বলে আসছেন।
সেই প্রসঙ্গ ধরেই বুধবারের অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি বঙ্গবন্ধু এভিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করেছিল।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা বোধহয় ভুলে যায়, তারা যে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে, এটা কিন্তু আমরা দিচ্ছি।
“খালেদা জিয়ার আমলে, জিয়ার আমলে বা এরশাদের আমলে তাদের কি কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল? অধিকার ছিল? কতটুকু অধিকার ভোগ করত তারা?”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অনেকগুলো বেসরকারি টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “টক শো তারা করে যাচ্ছে। কেউ তাদের গলা চেপেও ধরি না, মুখ চেপেও ধরি না। কথা বলেই যাচ্ছে। সব কথা বলার শেষে বলে- ‘কথা বলতে দেওয়া হয় না!’।”
বিএনপির কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির এক নেতা তো সারাদিন মাইক মুখে লাগিয়ে দিয়ে আছেন। সারাক্ষণ কথা বলেই যাচ্ছেন। একবার কথা বলতে বলতে গলায় অসুখও হল। যাক, চিকিৎসা করে এসে আবারও কথা বলছেন। কথা তো কেউ বন্ধ করছেন না।”
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিলে তা নিয়ে ব্যঙ্গ করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে সেই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে।”
বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া না দেওয়ায় তারা সরকারকে দুষছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে। কেন? তাহলে তারা কি এখনও সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের পদলেহনকারী, খোশামোদী, তোষামোদীর দল?
“পাকিস্তানিদের পদলেহনকারী সারমেয়র দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত, এটাই হচ্ছে দুঃখজনক। এখানও বাংলাদেশের ভালো কিছু হলে এরা দেখে না। বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে তাদের ভালো লাগে না।”
ছবি: পিআইডি
‘শাপে বর’
পদ্মা সেতু করতে গিয়ে নানা বাধা পাওয়ার কথা জানানোর সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, তাতে নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ খুলে গেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনুস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম গ্রামীণ ব্যাংকের এমিরেটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। সেটা সে ছাড়বে না, তার এমডিই থাকতে হবে।
“কিন্তু তার বয়সে কুলায় না। ড. ইউনূস আওয়ামী লীগ সরকারে বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে হেরে গিয়েছিল। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে রয়েছে কেউ ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে, কিন্তু তখন তার বয়স ছিল ৭১।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ড. ইউনূস, আমরা যেটা শুনেছি মাহফুজ আনাম, তারা আমেরিকায় চলে যায়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়, হিলারির (হিলারি ক্লিনটন) কাছে ই-মেইল পাঠায়। হিলারি বিশ্ব ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার শেষ কর্মদিবসে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়।
“একদিকে শাপে বর হয়েছে। কেন হয়েছে? বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।”
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের অর্থ ব্যয় নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেতুর কাজ হয়ে গেছে। এখন সেতু নিয়ে কথা বলতে পারছে না। এখন রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। যাক, আমার মনে হয় সকলের উনাকে চিনে রাখা উচিত। কারন রেললাইন যখন চালু হবে, উনাকে রেলে নিয়ে চড়ানো উচিৎ।”
‘জোড়া তালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হচ্ছে’, ‘ওখানে চড়া যাবে না’, ‘চড়লে ভেঙে পড়বে’- খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যেরও কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
ছবি: পিআইডি
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “এর ভেতরে আমাদের কিছু নতুন আঁতেল আবার জুটেছে। একজন অর্থনীতিবিদ বলেই দিল আমরা যে রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি, এটা নাকি অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ ক্ষতিকর। বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী, গুণী, তারা অর্বাচীনের মতো কথা বলেন কীভাবে?
“যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, এটা সব থেকে পরিবেশবান্ধব। গ্যাস চিরদিন থাকে না। একটা সময় নির্দিষ্ট থাকে। তেলভিত্তিক, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ আমরা করি, যা অনেক খরচেরও ব্যাপার। যদি কোনোদিন এমন হয় যে আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে, তখন এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টই তো আমাদের বিদ্যুৎ দেবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ হিসাব দেখালেন, তাকে আমি বলব তিনি কি প্রকৃত পক্ষে জেনেই বলছেন? না কি না জেনে বলছেন? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না। তার কারণ তারা অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন।
“কিন্তু একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে একটা মানুষের, একটা জাতির যে কতটা অর্থনৈতিক উন্নতি হতে পারে, সেটা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে, কিন্তু তারা দেখে না চোখে।”
“এখানে বিনিয়োগটা বড় করে দেখা যায়। কিন্তু এই বিদ্যুৎ যখন উৎপাদন হবে, আর এই বিদ্যুৎ যখন মানুষের কাজে ব্যবহার হবে, আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি অবদান রাখবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“আজকে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে বলেই সারা বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট শুরু করার সময়ও এটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার যে বিদ্যুৎ দিয়েছে, সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করেই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে।”