গত বছরের প্রথমার্ধেও বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো
মাইনিং হাব ছিল চীন। বৈশ্বিক বিটকয়েন নেটওয়ার্কের প্রসেসিং সক্ষমতার ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ
ছিল চীনের একার।
কিন্তু, চীনের মাইনিং শিল্পে বড় ধাক্কা লাগে
২০২১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে। কয়েক ধাপে নীতিমালা পরিবর্তন করে ক্রিপ্টো মাইনিং নিষিদ্ধ
করে চীন। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুযায়ী, চীনের ক্রিপ্টো মাইনিং সক্ষমতা কার্যত
শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
ক্রিপ্টো মাইনিংয়ের বিদ্যুৎ খরচ বরাবরই বিতর্কের
জন্ম দিয়েছে। চীন মাইনিং প্রক্রিয়া নিষিদ্ধ করার পর মাইনারদের অনেকেই দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র
ও কাজাখস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন।
জুলাই মাসে চীনের মাইনিং সক্ষমতা শূন্যের
ঘরে নেমে এলেও কিছুদিন পড়েই দেশটিতে গোপন মাইনিং শুরু হওয়ার খবর জানিয়েছিল সিএনবিসি।
চীনের পরিস্থিতির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে
‘কেমব্রিজ সেন্টার ফর অল্টারনেটিভ ফাইন্যান্স’-এর নতুন এক গবেষণা। গবেষণায় উঠে এসেছে,
খুব দ্রুতই নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে চীনের বিটকয়েন মাইনিং জগত। ২০২১
সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৈশ্বিক বিটকয়েন মাইনিং খাতের ২২ শতাংশ কার্যকর ছিল চীনে।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিশ্ববাজারে বিটকয়েন
মাইনিংয়ে শীর্ষদের তালিকায় আবারও জায়গা করে নিয়েছে চীন।
তবে, গবেষণার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ত্রুটির
বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা। বড় আকারের বিটকয়েন মাইনিং ‘পুল’-এর ভৌগলিক অবস্থানের
তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন তারা। এর মাধ্যমে কোন দেশে সবচেয়ে
বেশি মাইনিং চলছে সেটি নির্ধারণ করেছেন গবেষকরা।
এক্ষেত্রে মাইনারদের ভিপিএন বা ভার্চুয়াল
প্রাইভেট নেটওয়ার্কের ব্যবহার ভুল তথ্য দিতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ভিপিএনের
মাধ্যমে ইন্টারনেট ট্রাফিক ভিন্ন কোনো দেশের সার্ভারের মাধ্যমে আদান-প্রদানের সুযোগ
পান ব্যবহারকারী। চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় দেশটির নাগরিকদের
মধ্যে ভিপিএন অ্যাপের বহুল ব্যবহারের চল রয়েছে।
এক্ষেত্রে ভিপিএনের কারণে চীনে বিটকয়েন মাইনিংয়ের
বাস্তবিক তথ্যে কিছুটা কম-বেশি হওয়ার সুযোগ থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতির ভুল উপস্থাপন
হচ্ছে না মনে করেন গবেষকরা।
বেইজিং কেন শঙ্কিত?
সিএনবিসি বলছে, ক্রিপ্টো মাইনিং নিয়ে বেইজিংয়ের
মাথা ব্যথার একটি বড় কারণ হচ্ছে এর লাগামহীন বিদ্যুৎ খরচ। সুইডেন বা নরওয়ের আকারের
একটি দেশের বার্ষিক বিদ্যুৎ চাহিদার সমান বিদ্যুৎ খরচ হয় চীনের বিটকয়েন মাইনিং খাতে।
এর আগেও ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ে একাধিকবার
সতর্ক করে দিয়েছিল চীন সরকার। তবে, চীনের গত বছরের পদক্ষেপগুলোই সম্ভবত সবচেয়ে কঠোর
ছিল। অন্যদিকে, গত বছরেও টানা কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ শঙ্কটে ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম
অর্থনীতির দেশটি।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চীন এখনও কয়লার ওপর
নির্ভরশীল। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নবায়োনযোগ্য
শক্তি খাতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করছে বেইজিং। ক্রিপ্টো মাইনিংকে এই লক্ষ্য অর্জনের
প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে চীন সরকার।