ক্যাটাগরি

সাভারে পিটুনিতে নিহত ‘ছিনতাইকারী খেলনা বিক্রেতা’

রংপুরের
এই যুবক সাভারে থেকে রিকশাভ্যানে করে প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রি করতেন বলে পুলিশ ও তার
পরিবার জানিয়েছে।

এ ঘটনায়
পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৩/৪ জনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।

নিহত নাজমুল
মিয়া (৩০) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে। সাভারের
রাজফুলবাড়ীয়ার সাকিপাড়ায় বড় ভাই মঞ্জু মিয়ার সঙ্গে থাকতেন।

মামলা তদন্তকারী
কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই শ্যামল বলেন, গণপিটুনিতে ছিনতাইকারী নাজমুলের মৃত্যুর
ঘটনায় আরেকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ছিনতাই চেষ্টার সময় নাজমুলের পুরো
শরীরে কাফনের কাপড় পরিহিত ছিল।

“এমন ঘটনায়
হতবাক তদন্ত সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাছাড়া সে ছিল খেলনা বিক্রেতা।”

আশুলিয়া
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা জেলা ট্রাফিক বিভাগের
এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। সোমবার
ঘটনার রাতে তিনিই চলন্ত বাসে উঠে ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরে আটক করেছিলেন।

নিহত নাজমুলের
বড় ভাই গার্মেন্টস শ্রমিক মঞ্জু মিয়া বলেন, “আমি কিছু বুঝতে পারছি না। নাজমুল সাভারে
রিকশাভ্যানে করে প্লাস্টিকের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী বিক্রি করত। ৮/৯ বছর ধরে সাভারে
রয়েছে। আমার পাশের ঘরে নাজমুল তার স্ত্রীসহ থাকত। তিন দিন আগে তার বউ বাড়ি চলে যায়।”

আশুলিয়ায় বাসে ‘যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীকে’ পিটিয়ে হত্যা
 

সোমবার
রাতে বাসে নাজমুল কোথায় গিয়েছিলেন জানেন না বলে জানান মঞ্জু।

ঘটনার রাতের
বর্ণনা দিয়ে মামলার বাদী এসআই হেলাল উদ্দিন বলেন, সোমবার মধ্যরাতের দিকে ঢাকা-আরিচা
মহাসড়কের আশুলিয়ার নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাভার পরিবহনের একটি বাস ‘যাত্রীবেশী
ছিনতাইকারীর’ কবলে পড়ে।

“ওই বাসের
যাত্রীদের চিৎকার শুনে পিছনে থাকা হানিফ পরিবহনের একটি বাসে উঠে সেটিকে একটু সামেন
নিয়ে ওই বাসটির [সাভার পরিবহন] গতিরোধ করি। তখন ছুরি হাতে তিন জনকে বাসের জানালা দিয়ে
লাফিয়ে চলে যেতে দেখি।”

ওই সময়
বাসের ভিতরে এক ব্যক্তিকে পুরো শরীরে দুই ভাগে কাফনের কাপড় পরা ও ছুরি হাতে যাত্রীদের
জিম্মি করে আক্রমণ করার চেষ্টা করছিল বলে জানান হেলাল।

“সে আমাকে
খেয়াল করেনি। আস্তে করে উঠে পিছন দিকে থেকে একহাতে তার ছুরিটি ধরে ফেলি ও আরেক হাত
দিয়ে গলা ঝাপটে ধরি। আমাকে হামলার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তি করে তাকে বাস থেকে নিমে নামিয়ে
ফেলি। এসময় উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দেয়।”

তিনি জানান,
প্রায় ২০-২৫ জন যাত্রী ছিল। যে যার মতো চলে যায়। সাভার পরিবহনের বাসটি থামতে বললেও
থামেনি। এর আগে পিটুনিতে ছিনতাইকারীর কাফনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। ভিতরে জিন্স প্যান্ট ও
গেঞ্জি পরা ছিল।

পরে তিনি
বিষয়টি আশুলিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করলে তারা গিয়ে ছুরিসহ কাফনের কাপড় জব্দ করে বলে
জানান এসআই হেলাল।

হেলাল জানান,
এ সময় উপস্থিত উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থলে
পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন
অবস্থা তিনি মারা যান।

মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এসআই শ্যামল বলেন, “কাফনের কাপড় পরিহিত ছিল কেন?
আমাদেরও অবাক করেছে বিষয়টি। নাজমুল একসময় গার্মেন্টসে চাকরি করত। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে
ফেরি করে খেলনা বিক্রি করত। তার বিষয়ে আমরা আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেগুলো তদন্ত
করে দেখা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত তার সহযোগীদের আটক করতে পারব।”