বুধবার দুপুরে সিলেট
নগরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট
হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে।
“এ ব্যাপারে আমাদের
সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার
আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।”
দুপুরে নগরের চালিবন্দর
এলাকায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের
বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে সিলেটের ছয়
উপজেলা ও নগরীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ,
জকিগঞ্জ, সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাবার
ও পানির সংকট। সিলেট নগরী ও আশপাশের অন্তত ৫০ পরিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
মন্ত্রী বলেন, “সিলেটে
এই মৌসুমে সবসময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ই এমনটি দেখেছি। কিন্তু পানি আটকে থাকত
না; চলে যেত। কারণ আমাদের শহরেও অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর
ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘীর শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর দিঘি ভরাট
করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি।”
এছাড়া প্রধান নদীগুলোর
তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে; খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কারণে পানি
নামতে পারছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।
মন্ত্রী নগরের ভেতরের
পুকুর-দিঘিসহ জলাশয়গুলো রক্ষায় সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে তিনি ড্রেনগুলো
খনন করা এবং আরও বড় করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
বন্যার্তদের উদ্দেশে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই পানি বেশি দিন থাকবে না। দ্রুতই নেমে যাবে। ফলে কয়েকটা দিন
কষ্ট করতে হবে। এই সময়ে সরকার আপনাদের পাশে আছে।
ত্রাণ বিতরণকালে দুর্যোগ
ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তিনি বলেন, সিলেটে
বন্যাদুর্গত এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ
দেওয়া হবে।
“দুর্যোগ মোকাবেলায়
সরকার প্রস্তুত আছে। আমরা আজকে সিলেটের দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখব। প্রশাসনের কর্মকর্তা
ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করব। সবার সাথে আলাপ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানব।
এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এনামুল হক বলেন, প্রত্যেক
বছরই এই অঞ্চলে ঢল নামে। কিন্তু এবার ব্যাপক আকারে ঢল নেমেছে। সিলেটের উজানে মেঘালয়ের
চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
বন্যা মোকাবেলায় আগামীতে
এই অঞ্চলের নদনদীগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীর পানি
ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এই নদীগুলো ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চালিবন্দরে ত্রাণ বিতরণ
শেষে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিরাবাজার এলাকার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এরপর সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট সিটি
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান,
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মহানগর আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।