কিছুটা হলেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের লিড নেওয়ার পর মুমিনুল হকের দল দিনের শেষ সময়ে নিতে পেরেছে শ্রীলঙ্কার দুটি উইকেট।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৩৯৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৪৬৫ রানে। শ্রীলঙ্কা বুধবার দিন শেষ করে ২ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে লঙ্কানরা পিছিয়ে এখন ২৯ রানে।
আগের দিন ফিফটি পেরিয়ে অপরাজিত থাকা দুই ব্যাটসম্যানের ইনিংস এ দিন প্রায় একইভাবে এগোলেও পরিণতি দুইরকম। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রান ছোঁয়ার পর ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিতে মুশফিক আউট হন ১০৫ রান করে। ২৭০ বলে করা এই সেঞ্চুরি তার ক্যারিয়ারের মন্থরতম।
মুশফিকের আগেই সেঞ্চুরি পাওয়ার পথে ছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু ৮৮ রানে বাজে এক শট খেলে তিনি শেষ করে দেন নিজের সম্ভাবনা।
৫৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেন লিটন, ৫৩ রানে মুশফিক। বৃষ্টি ভেজা মাঠে খেলা শুরু হয় আধা ঘণ্টা দেরিতে। দ্রুত লিড নেওয়া কিংবা রান বাড়ানোর খুব তাড়া দেখা যায়নি দুজনের কারও ব্যাটিংয়ে। লিটন যদিও দিনের শুরুতে কিছু শট খেলেন, পরে গুটিয়ে নেন নিজেকে। মুশফিক তো খোলসের মধ্যে ছিলেন ইনিংসজুড়েই।
দুজনের কেউ কোনো ঝুঁকি নেননি, আগ্রাসী শট খেলার চেষ্টাও করেননি কেউ। ৫ হাজার পূর্ণ করতে এ দিন ১৫ রান প্রয়োজন ছিল মুশফিকের। সেটুকু করতে তার লাগে ৪৮ বল। এরপরও ব্যাটিংয়ের ধরন রয়ে যায় একই। প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে রান আসে ৬৭।
দ্বিতীয় সেশনে রানের গতি নিয়ে ভাবার আগেই জোড়া ধাক্কা। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই আউট লিটন। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা কাসুন রাজিথার বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। এতটাই বাজে শট যে হতাশায় তিনি ক্রিজেই দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।
পরের বলেই রাজিথার আরেকটি ছোবল। আগের দিন ১৩৩ করে ক্র্যাম্পের কারণে ব্যাটিংয়ে না নামা তামিম ইকবাল নতুন দিনে নেমে টিকতে পারেননি একটি বলও। দারুণ ডেলিভারি তামিমের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উপড়ে দেয় মিডল স্টাম্প।
মুশফিক ও সাকিবের জুটিতে লিড নিয়ে চারশ পেরিয়ে যায় দলের রান। সাকিবকে উইকেটে খুব স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি। তবে টিকে থাকার চেষ্টা আছে বলে মনে হচ্ছিল। সেই চেষ্টা থামান আসিথা। পাঁজর তাক করে একের পর এক শর্ট বলে লঙ্কান পেসার নাড়িয়ে দেন সাকিবকে। একবার বল লাগে তার হেলমেটে। আরেকটি শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে সাকিব (২১) হারান উইকেট।
মুশফিক তখনও এক প্রান্তে হার ধরে আছেন। তাকে নাড়াতে পারেননি কেউ। আসিথার বলে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে তিনি পৌঁছে যান শতরানে।
তার প্রতিরোধের দেয়ালে ফাটল ধরে চা বিরতির পর। লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে সুইপ করতে গিয়ে রাউন্ড দা লেগ বোল্ড হয়ে থামে তার ২৮২ বল আর ৪৪৯ মিনিটের লড়াই।
তার ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল স্রেফ ৪টি। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার ইনিংসে এত কম বাউন্ডারি নেই বাংলাদেশের আর কারও।
মেহেদী হাসান মিরাজ না থাকায় লোয়ার মিডল অর্ডারে ভরসার জায়গা ছিল কম। তাইজুল ইসলাম তবু ২০ রান করেন। নাঈম হাসান ৫৩ বল টিকে থেকে লম্বা করেন দলের ইনিংস।
বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হিসেবে তৃতীয় দিন মাঠে নামা কাসুন রাজিথা সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে নেন ৪ উইকেট। তার বলেই শট খেলতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেয়ে শরিফুল ইসলাম রিটায়ার্ড আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করে দিমুথ করুনারত্নে ও ওয়াদা ফার্নান্দোর জুটিতে। দ্বাদশ ওভারে তাইজুলের থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগায় কাটা পড়েন ওশাদা ফার্নান্দো। তাইজুল একটু পরে বোলিংয়ে এসে দারুণ টার্নিং বলে আউট করেন নাইটওয়াচম্যান এম্বুলদেনিয়াকে।
এই দুটি উইকেটই খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার দুয়ার। দুই দলেরই মন্থর ব্যাটিংয়ে মিইয়ে আসা ম্যাচের শেষ দিনটি শুরু হচ্ছে তাই রোমাঞ্চ নিয়েই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৯৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৭০.১ ওভারে ৪৬৫ (আগের দিন ৩১৮/৩) (তামিম ১৩৩, মুশফিক ১০৫, লিটন ৮৮, সাকিব ২৬, নাঈম ৯, তাইজুল ২০, শরিফুল ৩ রিটায়ার্ড আউট, খালেদ ০*; বিশ্ব ৮-০-৪২-০, আসিথা ২৬-৪-৭২-৩, রমেশ ৪৫-১০-১১৯-০, এম্বুলদেনিয়া ৪৭-৯-১০৪-১, ধনঞ্জয়া ১৯-২-৪৮-১, রাজিথা ২৪.১-৬-৬০-৪, কুসল মেন্ডিস ১-০-৮-০)
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭.১ ওভারে ৩৯/২ (ওশাদা ১৯, করুনারত্নে ১৮*, এম্বুলদেনিয়া ২; নাঈম ৯-৩-২১-০, খালেদ ১-০-৬-০, সাকিব ৬-৩-১২-০, তাইজুল ১.১-১-০-১)।