ক্যাটাগরি

সম্রাটের জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের করা এক আবেদেনের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল
ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ
দেয়।

একই সাথে আসামি সম্রাটকে সাত দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের
নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাওয়া সম্রাট এখন আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, আর আসামিপক্ষে
ছিলেন আইনজীবী ছিলেন মনসুরুল হক চৌধুরী। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল
এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

সম্রাটের জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে গত ১৪মে ‘রিভিউ’ আবেদন করেছিল
দুদক। সেই আবেদনের ওপর শুনানি করে বুধবার আদেশের জন্য দিন রাখে আদলত।

আদেশের বিষয়ে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “হাই কোর্ট বলেছেন
বিচারক মামলার গুণাগুণ বিচার না করে, শুধু মেডিকেল গ্রাউন্ডে এ জামিন দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, কেউ যদি স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে জামিন চান, তাহলে বিচারককে
মেডিকেল রিপোর্ট কল করতে হবে, সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করতে হবে, এবং দুইপক্ষকে শুনতে
হবে, তারপর জামিন দেবে কিনা আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।

“কিন্তু বিচারক ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছে, হাই কোর্ট আদেশে ঠিক এইভাবে
অবজার্ভেশন দিয়েছে। বিচারক এই জামিন দিয়েছেন ২০২০ এবং ২০২১ সালের প্রথম দিকের দুটি
মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে, শেষের দিকে লিখে দিয়েছেন আগামী ৯ তারিখের (৯ জুন) রিপোর্ট
দাখিল করতে হবে।”

সম্রাটের জামিনে আইনের কোন বিষয়ে ব্যতয় হয়েছে প্রশ্ন করলে খুশরীদ আলম বলেন,
“জামিন দেওয়ার আগে বিচারকের উচিত ছিল ৯ জুন পর্যন্ত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দেখে উনার
জামিনের বিষয়টি দেখা, তারপর কনসিডার করবেন বা রিজেক্ট করবেন। এখানে সেই ব্যতয় ঘটেছে।”

তাছাড়া অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের ১৩ ধারায় জামিনের কিছু শর্ত রয়েছে জানিয়ে
দুদকের আইনজীবী বলেন, “সেসব শর্তও উনি পালন করেননি। হাই কোর্ট (নিম্ন আদালতের)
বিচারককে সতর্ক করে দিয়েছেন, ভবিষতে যাতে এই ধরনের ভুল না হয়।”

সম্রাটের আত্মসমর্পণের আদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, “আদালত সম্রাটের জামিন
বাতিল করে সাত দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে বলেছে, তাকে জামিনের বিষয়ে
মেডিকেল রিপোর্ট যদি কল করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আইনিভাবে যেন নিষ্পত্তি করা হয়।”

অন্যদিকে সম্রাটের আইনজীবী
মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, “নিম্ন আদালতের আদেশের সামান্য ত্রুটির কারণে জামিন বাতিল
করেছে হাই কোর্ট। সম্রাট এখনও অসুস্থ, আমি আদালতকে বলেছি- তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে
ভর্তি আছেন। আজকের আদেশ অনুযায়ী বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে মেডিকেল গ্রাউন্ডেই
আবার জামিন আবেদন করা হবে।”

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে ১১ মের
মধ্যে অস্ত্র, অর্থ চাপার, মাদক ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের চার মামলায় জামিন পান ক্যাসিনোকাণ্ডে
আলোচিত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট।৩১ মাস পর মুক্তি মেলে তার।

তার আগেও প্রায় দেড় বছর কারা
তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাধীন
ছিলেন সম্রাট। ১১ মে বিকালে জামিনের কাগজপত্র হাসপাতালে পৌঁছালে সেখানেই তার
মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়। মুক্তির পরও তাকে হাসপাতালের ‘ডি’ ব্লকের সিসিইউতে
ভর্তি রাখা হয় অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে।

হাসপাতালের পরিচালক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হার্টের
ক্রনিক অসুখে’ আক্রান্ত সম্রাটকে হাসাপাতালেই রাখার পক্ষে তারা। তবে তবে পরিবার চাইলে
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য হাসপাতালে বা বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন। 

চার মামলাতেই জামিন, সম্রাটের মুক্তিতে ‘বাধা নেই’

মুক্তি পেলেন সম্রাট, আছেন হাসপাতালেই
 

সম্রাটকে হাসপাতালেই রাখার পক্ষে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ

ইসমাইল হোসেন সম্রাট

ইসমাইল হোসেন সম্রাট

২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের
অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত এই
নেতা সম্রাট।

এরপর ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী
এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সেদিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে
কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়।

সেদিন প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল,
১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

কার্যালয়ে ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার
রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। পরে অর্থপাচার এবং
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগেও সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা হয়। 

অস্ত্র মামলা: সম্রাটের
বিরুদ্ধে দায়ের করা চার মামলার মধ্যে রমনা থানার অস্ত্র মামলাটিতে ২০১৯ সালে বছর ৬
নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলায় সম্রাটের জামিন হয়
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল।

অর্থ পাচার মামলা: সম্রাটের
বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এরপর ৯ ডিসেম্বর মাদক
মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র‌্যাব। এই
মামলায় সম্রাটের জামিন হয় অস্ত্র মামলার জামিন হওয়ার দিনে, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল।

মাদক মামলা: ঢাকার রমনা থানায়
মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০১৯ সালে। এই মামলায় সম্রাটের
জামিন আদেশ আসে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা: ২০১৯ সালের ১২
নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার
অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর
অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। গত ১১ মে এ মামলায়
জামিন পেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ
মামলা বর্তমানে অভিযোগ গঠনের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

পুরনো খবর

সম্রাটসহ যুবলীগের ৪ নেতা লাপাত্তা
 

যুবলীগের সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

যুবলীগের সম্রাট ও আরমান কুমিল্লায় গ্রেপ্তার

যুবলীগের সম্রাটের অফিসে অস্ত্র, ইয়াবা, ক্যাঙ্গারুর চামড়া

কুমিল্লায় আত্মীয়র বাসায় সম্রাট ‘লুকিয়ে ছিলেন ৩ দিন ধরে’

সম্রাট ও আরমানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাস করে সাজা