কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। পানিবন্দি মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন।
বুধবার সকালে দেখা গেছে, নগরীর আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
বন্যায় জেলাজুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বন্যা কবলিতদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বেলা ১২টায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে; তবে এখনও তা বিপৎসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুরমা সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপৎসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে আট সেন্টিমিটার; এখন তা বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট ফায়ার সার্ভিস অফিস, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, কোতোয়ালী থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। সিলেট নগর ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এখন পানি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মরহুম বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছড়ারপারের বাসায়ও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার রাতে বাসার নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
কামরানের বড় ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু বলেন, “রাতে আমাদের পাড়ার রাস্তাঘাট তলিয়ে প্রায় সব বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। আমাদের বাসার নিচতলায় এখন হাঁটু সমান পানি। আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একটির উপর আরেকটি রাখা হয়েছে। আর পানি বাড়লে পুরোপুরি বেকায়দায় পড়ে যাব।”
পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে চলছে নৌকা।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে সিলেট নগরীর সাতটি ওয়ার্ডে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন।
সেগুলো হচ্ছে- ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরাবাজারস্থ কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চালিবন্দর রামকৃঞ্চ উচ্চবিদ্যালয় ও চালিবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাছিমপুরস্থ আব্দুল হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বুরহান উদ্দীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজালাল উপশহরস্থ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মির্জাজাঙ্গালস্থ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কাজিরবাজার স্কুল, মনিপুরি রাজবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র ও মাছুদিঘীর, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা স্কুল, ইউনিসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলয়ের চতুর্থ তলা বিল্ডিং এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের চালিবন্দর এলাকার মহাশশ্মানঘাট। নগরীর একটিমাত্র স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মৃতদেহ দাহ করেন। এখন আর সেখানে দাহ করার কোনো উপায় নেই।
শ্মশানঘাট সংস্কার ও সংরক্ষণ কমিটি সিলেটের সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “মহাশ্মশানঘাটের শবদাহ পোড়ানোর চুলা তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে সিলেট নগরের উপকণ্ঠের দেবপুর এলাকার শ্মশানঘাটে দাহকার্য সম্পন্ন করার অনুরোধ করা হয়েছে।“
আরও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে দুই শতাধিক স্কুল প্লাবিত, ২৮টি সাময়িক বন্ধ