প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার
বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ
সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে বিস্তারিত
তুলে ধরার পাশাপাশি ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে’ সবাইকে
সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,
“আমাদেরও হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও র্যাশনাল বিহেভ করতে হবে
সেজন্য আমরা মিডিয়াকে অনুরোধ করব এটাই একটু পজিটিভ ওয়েতে প্রচার করার জন্য।
“আমরা সবাই যেন একটু
সাশ্রয়ী থাকি বা র্যাশনাল থাকি।”
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ে ডিটেইল
আলোচনা হয়েছে। কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রিকে কতগুলো ইনস্ট্রাকশন দেওয়া
হয়েছে, পর্যাপ্ত এবং কম্প্রিহেনসিভ ব্যবস্থা নিয়ে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য।
“বিশেষ করে কিভাবে আমরা
এই যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বা সাপ্লাই কমে যাচ্ছে, এই জিনিসগুলো কিভাবে
হ্যান্ডেল করতে পারব? কোন জায়গায় রেস্ট্রিকশন দিলে ভালো হবে বা ওপেন করলে ভালো হবে?
“এগুলো দু-তিন দিনের
মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তুলে ধরতে হবে। ডলারের যে ক্রাইসিস হচ্ছে এটা কীভাবে সলভ
করা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসে দু-তিনদিনের মধ্যে প্রেসের সামনে বসার জন্য।”
দু-তিন দিনের মধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বলে
জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আমদানিতে কাট-ছাঁটের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “তাদের
বলা হয়েছে, এই সিনারিওতে আমাদের কী করণীয়, যেমন মনে করেন আপনি একটি সাজেশন দিলেন
ফল আনার মধ্যে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন যাতে ফল বেশি না আসে।
“এখন বৈশাখ মাস এখন তো
আমার আম জাম কাঠাল পর্যাপ্ত থাকবে। এরকম একটি সাজেশন আপনি দিলেন এটা বিবেচনা করে
লজিক্যাল কিনা সেটা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
আমদানি কমাতে শুল্ক বাড়ানোর কৌশল ব্যাখ্যা করে খন্দকার
আনোয়ারুল বলেন, “৮ বা ৯ হাজার কোটি টাকার
ফল আসে বছরে। ৯ হাজার কোটি টাকা ইজ মোর দেন ওয়ান বিলিয়ন ডলার।
“এখন ট্যাক্স যদি
সাময়িকভাবে বাড়ানো হয় বা অন্য যে ফেন্সি আইটেমগুলো আছে সেগুলোতে ট্যাক্স বাড়ান, এই
বিষয়গুলো আলোচনা করে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।”
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গঠনমূলক আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে গণমাধ্যমকে
উদ্দেশ্য করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আপনাদের কাছেও আমাদের
একটি আবেদন যে গঠনমুলক জিনিসগুলো আলোচনা করতে হবে।
“এই যে কোভিড রিকভার করা
যাচ্ছিল কিন্তু ইউরোপের যে যুদ্ধটা এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইকোনোমিক ক্রাইসিস শুধু না
সাপ্লাইয়েরও একটি ক্রাইসিস হচ্ছে। কারণ রাশান দেশগুলো হল ফুড এবং এনার্জি সাপ্লাইয়ে
সারপ্লাস।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “এখন এখান থেকে যদি না
বের হতে পারে ফুড এবং এনার্জি তাহলে সারা পৃথিবীই কিন্তু ভুগছে। কালই দেখলাম নাইন
পারসেন্ট ইনফ্লেশন হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে। আমেরিকাতে এইট পারসেন্টের বেশি।
“আমরা তো ওয়ার্ল্ডের বাহিরে
না, আমরা তো ওয়ার্ল্ডের অংশ।”
ব্যক্তিগত
উদ্যোগে হাট-বাজার বসালে অধিগ্রহণ করবে সরকার
ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোথাও স্থায়ী হাট-বাজার বসানো হলে তা
অধিগ্রহণের বিধান রেখে আনা হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন-২০২২ এর খসড়ায়
নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত
তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “এটা
আগে একটা অর্ডিন্যান্স ছিল ১৯৫৯ এর। এটাকে যুগোপযোগী করে আইন বানানো হয়েছে।
“এখানে প্রায় ২৬ টি ধারা
আছে। এই আইনের বিধান ছাড়া কোথাও কোনো হাট-বাজার বানানো যাবে না। হাট বাজার যদি
বানানো হয় তাহলে সরকার খাস জমি হিসেবে নিয়ে নেবে।”
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমি
যদি আমার বাড়িতে কোনো হাট বাজার বসাই, এটা মোহন মিয়ার একটি মামলা ছিল সরকারের
সাথে। উনি তখন কোর্টে গিয়ে জিতলেন যে এটা আমার ব্যক্তিগত হাট-বাজার, এটা খুব
বিখ্যাত একটি মামলা।
“পরবর্তীতে সরকার ডেফিনেশন
পরিবর্তন করে বলল যে, যেখানেই কেউ হাট-বাজার বসাবে সেটা খাস জমি হয়ে যাবে।”
প্রস্তাবিত আইনের প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এখনও
সরকারের পারমিশন ছাড়া কোনো হাট-বাজার বসানো যাবে না। এখানেও আগের ডেফিনেশন
স্ট্যান্ড করবে। এটা সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক অনুমতি দেবে।
“হাট-বাজারের কোনো জমি
স্থায়ী বন্দোবস্ত করা যাবে না। তবে এ সংক্রান্ত বিধিমালা অনুসরণ করে জেলা প্রশাসক
অস্থায়ীভাবে একজনের বিপরীতে সর্বোচ্চ আধা শতক জায়গা প্রদান করতে পারবে। এর বেশি দেওয়া
যাবে না।”
ব্রিফিংয়ে আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সরকার গেজেট দিয়ে স্থাবর
সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পর অথবা প্রযোজ্য
ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইনের ৯২ ধারা অনুসারে খাস ঘোষণা করে
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত তারিখ থেকে যে কোনো হাট ও বাজার দখল করতে পারবে।
“বলে দেওয়া হয়েছে, এই
জিনিসটা নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বছরে যদি একদিন হাট-বাজার বসে
সেটা অন্য কথা, কেউ যদি মেলা বসায়, কিন্তু স্থায়ীভাবে হাট-বাজার হিসেবে যদি বসে
তাহলে সরকার এটা নিয়ে নেবে।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, হাট ও বাজার অর্থ যে স্থানে জনসাধারণ
কর্তৃক দৈনিক অথবা সপ্তাহের নির্দিষ্ট কোনো দিন কৃষিপণ্য, ফলমুল, হাঁস-মুরগি, ডিম,
মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় পণ্য বা অন্য কোনো পণ্য বা শিল্পজাত পণ্য ও
দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় হয় এবং সেই স্থানে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য স্থাপিত দোকানও এর
অন্তর্ভুক্ত হবে।