ক্যাটাগরি

পি কে হালদারকে ফেরানোর বিষয়ে হল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার কী কী উপায় আছে, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ‘প্রয়োজনে’ একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়।

দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের জানান, কমিশনের অনুরোধে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সভা হয়।

“পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনা এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশের যে টাকা ভারতে চলে গেছে তা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং বাংলাদেশে ইন্টারপোল অথরিটিকে আইনি কার্যকরী,
ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা পরশু (মঙ্গলবার) অনুরোধ জানাই।

সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে এ সভা ডাকে জানিয়ে দুদক কর্মকর্তা মাহবুব খান বলেন, “মিটিংয়ে আসামি প্রত্যর্পণ আইনসহ সমস্ত আইন-বিধির যে সমস্ত বিধান আছে, এগুলো ব্যবহার করে কীভাবে তাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারি,
সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়।”

পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ও কূটনৈতিক
পদক্ষেপ ব্যবহারের বিষয়েও সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান
তিনি।

“ভারত থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের যে সমস্ত প্রমাণ প্রদর্শনের দরকার আছে, সেগুলো সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে কাজ সহসায় আমরা শেষ করব। কূটনৈতিক ও অন্যান্য চ্যানেল ব্যবহার করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

পি কে হালদারকে ফিরিয়ে
আনার আশা প্রকাশ করে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন,
“দুদক একা নয়, সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আমরা সফলকাম হব।”

পি কে হালদার এবং ভারতে তার পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রয়োজনে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে ভারত সফরের বিষয়েও
সভায় আলোচনা হয়, তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

“যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণ করে তারা তথ্য সংগ্রহ করবে। তবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা বলেন,
“যদি কমিটি করা হয়, তাতে দুদকের প্রতিনিধি তো থাকবেই। দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে পি কে হালদারের মানিলন্ডারিং নিয়ে মামলা করেছে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানে মামলা নেই।”

আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটি প্রথম সভা হলেও শিগগিরই আরও সভা করা হবে বলে জানান তিনি।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও আইন, পররাষ্ট্র, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ভারতে পি কে হালদারের পাচার করা অর্থের সঠিক পরিমাণ জানতে দেশটি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে দুদক বিএফআইইউ’কে
চিঠি দিয়েছে বলে জানান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব।

“পি কে হালদার যেসব টাকা ভারতে পাচার করেছে, তার তথ্য আমাদের কাছে অল্প আছে,
আরও বেশি পরিমাণ (তথ্য) যদি থেকে থাকে তার তথ্য বিএফআইইউ সংগ্রহ করে আমাদের কাছে যদি দেয়, তখন আমরা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেব।”

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য প্রদেশে পি কে হালদারের সম্পত্তি আছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে দুদক কর্মকর্তা বলেন, “এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিএফআইইউকে তথ্য সংগ্রহের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।”

পি কে হালদারের সম্পত্তির খোঁজ জানতে এবং গ্রেপ্তারে দুদক থেকে ভারতকে আহ্বান জানানো হয়েছিল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে পি কে হালদারের ব্যাপারে সম্পদের মামলা করে চার্জশিট দিয়েছে। তার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা করেছে। অল্পদিনের মধ্যেই এগুলোর চার্জশিটও হবে।

“তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ও ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা-
এ সমস্ত পদক্ষেপ একমাত্র দুদকই নিয়েছে। আমরা মনে করি, দুদকের এ সমস্ত পদক্ষেপের একটা প্রতিফলন ভারতে তার গ্রেপ্তারের পেছনে রয়েছে।”

২০১৯ সালের মাঝামঝি দুদকের তদন্ত শুরুর পর পি কে হালদারের পালিয়ে যাওয়ার খবর মেলে। তখন শোনা গিয়েছিল, তিনি কানাডায় চলে গেছেন।

কিন্তু গত ১৩ মে হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরদিন পি কে হালদারসহ ছয় জনের আসে গ্রেপ্তারের খবর।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে পি কে হালদার পুঁজিবাজার থেকে বিভিন্ন নামে শেয়ার কিনে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) মালিকানায় এসেছিলেন। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে ২০১৯ সালের শুরুতে পি কে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে। গত নভেম্বরে আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুদক।