কিইভ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, তারা বন্দি বিনিময় করবে। তবে কত সেনা বিনিময় করা হবে সেই সংখ্যা জানাতে তারা রাজি হয়নি।
মারিউপোলের ওই সেনারা প্রায় তিন মাস ধরে আজভস্তাইল স্টিলওয়ার্কসে মাটির নিচের বাঙ্কারে লুকিয়ে ছিল। এতদিন তারা বারবার আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত কিইভ থেকে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। তাদের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুইটি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের নেতা ডেনিস পুশিলিন বলেন, নগরীর প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ইউক্রেইনীয় সেনাদের প্রায় অর্ধেক আজভস্তাইল স্টিলওয়ার্কসে আশ্রয় নিয়ে ছিল। রাশিয়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেখানে বোমা হামলা চলালেও মাটির নিচের বাঙ্কার এবং টানেলের কারণে তারা রক্ষা পায়।
পুশিলিন বলেন, ‘‘অর্ধেকের বেশি সেনা এরইমধ্যে চলে গেছে- অর্ধের বেশি সেনা তাদের অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছে।
‘‘তাদের আত্মসমর্পন করতে দিন, তাদের বেঁচে থাকতে দিন। তারা যেসব অপরাধ করেছে সেগুলোর জন্য তাদের সততার সঙ্গে বিচারের মুখোমুখি হতে দিন।”
আজভস্তাইল থেকে উদ্ধার আহত সেনাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর যারা সুস্থ আছে তাদের একটি বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আজভস্তাইলে আরও প্রায় ৭০০ যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেছে: রাশিয়া
বন্দি ওই সব সেনাদের ভাগ্যে কী আছে সেটা নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা। তাদের উদ্ধারে গোপনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করা হচ্ছে, বলেন তারা।
এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেইন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ওলেকসান্ডার মোতুজাইনিক বলেন, ‘‘আমাদের সেনা সদস্যদের উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্র সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। জনসম্মুখে যেকোনো তথ্য প্রকাশ ওই প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
ইউক্রেইন বন্দি বিনিময়ের কথা বললেও রাশিয়া এ ধরনের কোনো কিছুতে তারা রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে।
আজভস্তাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক সদস্য ইউরোপে ডানপন্থি কয়েকটি সংগঠনের ইউক্রেইন ইউনিটের সদস্য। যারা ‘আজভ রেজিমেন্ট’ নামে পরিচিত। যাদেরকে মস্কো ‘নাৎসিবাদী’ বলে বর্ণনা করে বলেছে, নিজেদের অপরাধের জন্য তাদেরকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে। অন্যদিকে, ইউক্রেইন তাদের জাতীয় বীর বলছে।
আজভস্তাইল সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মারিউপোলে যুদ্ধের অবসান হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইন আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়া এই প্রথম দেশটির কোনো বড় নগরীর দখল পেলো। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন এখানে নিজের বিজয় দাবি করতে পারবেন।
বন্দর নগরী মারিউপোল দখলের মধ্য দিয়ে রাশিয়া আজভ সাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেল। সেইসঙ্গে ইউক্রেইনের পূর্ব ও দক্ষিণে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূখণ্ডের মধ্যেও অবিচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপিত হলো।
প্রায় তিন মাস ধরে রুশ বাহিনী মারিউপোল অবরুদ্ধ করে রেখে। এই সময়ে সেখানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি ইউক্রেইনের।
রেড ক্রস এবং জাতিসংঘ থেকে অবশ্য সেখান ঠিক কত জন যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে। বলেছে, সেই সংখ্যা অন্তত হাজার হবেই।
১৯৯০ এর দশকে চেচনিয়া এবং বলকান যুদ্ধের পর মারিউপোল যুদ্ধই ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।