রাশিয়ায় কর্মরত গুগলের বেশিরভাগ কর্মী রাশিয়ার বাইরে কোথাও গুগলের জন্য কাজ করার পক্ষে মত দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মার্কিন বাণিজ্য দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এই কর্মীদের একটি বড় অংশ দুবাইতে যেতে পারেন যেখানে গুগলের একটি বড় কার্যালয় রয়েছে। কিছু কর্মী গুগল ছেড়ে রাশিয়াতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিছু দিনের মধ্যেই রাশিয়ায় গুগলের আর কোনও কর্মী থাকবে না।
গত মার্চেই রাশিয়ার আদালত দেশটিতে গুগলের প্রধান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে। এর পরপরই গুগল রাশিয়ায় কর্মীদের দেশের বাইরে সরানোর প্রস্তাব দিতে শুরু করে। আদালতের নির্দেশে এরপর গুগলের অ্যাকাউন্ট থেকে সমুদয় অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে, কর্মী বেতন এবং অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য তহবিলের অভাবে পড়ে বলে প্রতিবেদনে বলেছে জার্নাল। তবে সরিয়ে নেওয়া অর্থের অঙ্ক বলতে পারেনি পত্রিকার সূত্র।
”রাশিয়া কর্তৃপক্ষ গুগল রাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার ফলে আমাদের রাশিয়া কার্যালয়টি আর কর্মক্ষম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে, রাশিয়াভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগ এবং পারিশ্রমিক প্রদান, সরবরাহকারী এবং বিক্রেতাদের অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় গুগলের রাশিয়ান অফিস নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে বলে বুধবার প্রকাশিত রাশিয়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক নথিতে উঠে এসেছে।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে পশ্চিমা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের আরও অবনতির বিষয়টিই তুলে ধরছে গুগলের কর্মী প্রত্যাহার এবং দেউলিয়া ঘোষণার বিষয়টি।
২০১৪ সালে অনলাইনে বাকস্বাধীনতার উপর রাশিয়া খড়্গহস্ত হলে গুগল রাশিয়ায় তার প্রকৌশল অফিস বন্ধ করে দেয়। তবে, মস্কো কার্যালয় থেকে গুগল বিজ্ঞাপন বিক্রি এবং পণ্য বিপণন অব্যাহত রেখেছিল। এখন সেটিও বন্ধ হলো।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এবং পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুগল মালিকানাধীন ইউটিউবের ওপর “ভুল তথ্য ছড়ানো এবং বিক্ষোভ উষ্কে দেওয়ার” অভিযোগ তোলে। এর পর মার্চে গুগল দেশটিতে বেশিরভাগ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, যার মধ্যে সব ধরনের বিজ্ঞাপনও রয়েছে।
তবে, রাশিয়া কার্যালয় বন্ধ করলেও সেখানে সার্চ, ইউটিউব, ম্যাপস এবং জিমেইলের মতো বিনামূল্যের পরিষেবাগুলি চালু রাখার কথা জানিয়েছে গুগল। ইউটিউবে ক্রেমলিনের চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া এবং রাশিয়া যেসব কনটেন্ট মোছার নির্দেশ দিয়েছে তা সরাতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে ইউটিউব রুশ নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে। পুতিন প্রশাসন এখনো রাশিয়ায় তুমুল জনপ্রিয় ইউটিউব বন্ধ করে দেয়নি।
গত মার্চে রাশিয়া ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয় এবং তাদের মূল সংস্থা মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেডকে একটি চরমপন্থী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে। অভিযোগ, এই সেবাটি ইউক্রেইনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ডাক দেওয়ার ও কল করার সুযোগ বন্ধ করেনি।