ক্যাটাগরি

কেন মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকটে ভারত?

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের আলোকে এ সংকটের পেছনের কারণগুলোর সারসংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হল।

ভারত কেন বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি?

চলতি বছরের টানা তাপদাহের কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং শিল্প কারখানার কর্মকাণ্ডে কোভিড সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কার্যক্রমে এপ্রিলে ভারতের বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছিল।

কোভিড-১৯ আঘাত হানার সময় থেকেই নতুন যেসব হাইব্রিড কাজের মডেল গৃহীত হয়েছে, তাতে লাখ লাখ ভারতীয়কে ঘর থেকেই কাজ করতে হচ্ছে। এ কারণে আবাসিক এলাকাগুলোতে দিনের বেলায়ও বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে গেছে।

বিদ্যুতের সরবরাহ ও ব্যবহারের মধ্যে ব্যবধান সাধারণত রাতেই বাড়ে, যখন সৌরবিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের চাহিদা বেড়ে যায়।

আগ্রাসীভাবে উৎপাদন বাড়ানোর কারণে ভারতের অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রেরই জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে; বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে এখন গড়পড়তা যে কয়লার মজুদ আছে, অন্তত গত ৯ বছরে একই সময়ে এর চেয়ে কম মজুদ আর ছিল না।

অভ্যন্তরীণ কয়লার ৮০ শতাংশই যার মাধ্যমে আসে, রাষ্ট্রপরিচালিত সেই কোম্পানি কোল ইন্ডিয়ার রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও ভারতীয় রেলওয়ে পর্যাপ্ত ট্রেন সরবরাহ করতে না পারায় অনেক কর্তৃপক্ষই তাদের খালি ভাণ্ডার পূর্ণ করতে পারেনি।

ভারত কী করছে?

বিদ্যুতের এই সংকট ভারতকে তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার আমদানি শূন্যে নামিয়ে আনার নীতি বদলাতে বাধ্য করেছে, তারা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে তিন বছরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে মজুদ বাড়াতে আমদানি অব্যাহত রাখতেও বলেছে।

দেশটি আমদানি করা কয়লা দিয়ে চালিত সব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে জরুরি আইনও জারি করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় এই কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই বন্ধ ছিল।

এদিকে কয়লা পরিবহনের পথ খালি রাখতে রাষ্ট্রপরিচালিত ভারতীয় রেলওয়ে অসংখ্য যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে। অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয় বলে বিবেচিত শতাধিক কয়লাখনি ফের চালুরও পরিকল্পনা করছে দেশটি।

কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

নাগরিকদের ওপর জরিপ চালানো প্রতিষ্ঠান লোকাল সার্কেলসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতজুড়ে তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ৩৫ হাজার মানুষের অর্ধেকই চলতি মাসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

চাহিদা মেটাতে কর্তৃপক্ষের হিমশিম খাওয়ার মধ্যে অন্তত তিনটি রাজ্যের কারখানাগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়েছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ লাগে এমন শিল্পকারখানা পরিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কয়লা সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ায় কারখানাগুলোকে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ টানতে হয়েছে, যা শিল্পকারখানাগুলোর খরচ এবং সামর্থ্যের অতিরিক্ত কাজ করা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ আরও বাড়াচ্ছে।

ভারতের সর্ববৃহৎ অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ও ইস্পাতের মিল যে রাজ্যে অবস্থিত সেই উড়িষ্যায় গত বছরের অক্টোবর থেকে মার্চে বিদ্যুতের ব্যবহার ৩০ শতাংশের উপরে বেড়েছে, যা গড় জাতীয় বৃদ্ধির প্রায় ১০ গুণ।

পরে যা হতে পারে?

কম কয়লা মজুদ এবং ৩৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ার কারণে চলতি বছর ভারতকে আরও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন এ বছর সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, এ হার এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ভারতের মোট বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৭৫ শতাংশই এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে আসে।

তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের বর্ষা মৌসুমে কোল ইন্ডিয়ার উৎপাদন এবং ট্রেনের মাধ্যমে সেগুলো পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সে রকম হলে সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।