বুধবার ঢাকার মতিঝিল ও পল্টনের একাধিক মানি এক্সচেঞ্জে গিয়ে এমন দরে
কেনা-বেচা দেখা গেছে।
বৈদেশিক মুদ্রা কেনা-বেচাকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা বলছেন, ডলারের
সরবরাহ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দর নেমেছে।
খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় মূল্য কমলেও ব্যাংকে নগদ মূল্যে ডলারের বিনিময়
হার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
আগের দিনের বিনিময় মূল্যই দেখা গেছে মতিঝিলের উত্তরা, সাউথ-ইস্ট ও ঢাকা
ব্যাংকের শাখাগুলোতে। বেলা ২টা থেকে চারটা পর্যন্ত এসব শাখায় ডলার কিনতে কাউকে দেখাও
যায়নি।
ব্যাংক পাড়া মতিঝিলের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী রেজাউল করিম রিজু নামে
একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ প্রচুর
ডলার আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ডলারের অভাব নাই..যত লাগবে দিতে পারমু। এহন ৯৮ টাকা… আর
অন্য সময় নিলে যহন নিবেন, তহনকার রেট আলাদা।”
বিদেশ গমনেচ্ছুদের ডলার সংগ্রহের সবচেয়ে সহজ উৎস হচ্ছে মানি এক্সচেঞ্জ
প্রতিষ্ঠানগুলো। পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার সংগ্রহ করা
তুলনামূলক সহজ।
এসব প্রতিষ্ঠানে ডলার কিনতে আসার পাশাপাশি বিদেশ ফেরতরা ডলার বিক্রি
করতেও আসেন। তখন ব্যাংকের চেয়ে বিনিময় মূল্য কিছুটা হলেও বেশি পান তারা। এটিই খোলা
বাজার। এখানে ডলারের প্রধান উৎস হচ্ছে প্রবাসী কর্মী ও পর্যটক।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে প্রবাস ফেরত ও বিদেশি পর্যটক থেকে তেমন ডলার
যেমন মিলছে না, অন্যদিকে বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায় বিদেশ ভ্রমণ গেছে বেড়ে- এটাই ডলার সঙ্কটের
কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয়কর্মীরা।
গত মঙ্গলবার ডলারের বিনিময় হার ১০২ টাকায় উঠে যায় ছুঁয়েছিল।
খোলা বাজারে একশ ছাড়াল, ডলার ‘মিলছে না’ তবুও
ফের কমানো হল টাকার মান, ডলারের বাজার লাগামহীন
এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও আরোপও ডলারের
চাহিদা কমে দর কমায় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন খোলাবাজারের বিক্রয়কর্মীরা।
পল্টনের পাফ মানি এক্সেচেঞ্জের বিক্রয়কর্মীরা বুধবার সকালে ৯৯ টাকায়
ডলার বিক্রি করলেও বিকালে ৯৭ টাকায় করেন।
প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী মোহাম্মাদ জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে বলেন, ‘গতকাল ১০২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল
ডলারের দর। কিন্তু আজ সকালে শুরু হয় ৯৯ টাকায়। দুপুরের দিকে ৯৮ টাকায়ও বিক্রি করি।
“এরপর আর ডলার কিনি নাই। অনেকেই বিক্রি করতে আসছিলেন,
কিন্তু পড়তি বাজার দেখে যারা বুকিং (চাহিদা জানিয়ে রাখা) দিয়ে রেখেছিলেন তাদের জন্যই
ডলার কিনছি।”
কথা বলার সময়ই একজন বিক্রেতা ডলার নিয়ে এসেছিলেন। তখন ওই বিক্রেতাকে
৯৬ টাকা ৫০ পয়সা দর বলা হয়। কিন্তু এই দরে তিনি রাজি হননি।
মেক্সিমকো মানি চেঞ্জিংয়ের বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল হাসানও জানান, ডলারের
চাহিদা কমেছে, দরও।
“আমরা বেশি লাভ করি না…কোনো
কোনো সময় ৫ পয়সাও লাভ করে ডলার ছেড়ে দিই। এখন ধরে রাখলে অনেক লোকসান হতে পারে।”
ডেমরা থেকে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করাতে
এসেছিলেন দিলারা জাহান। দুপুরে এলেও দর বেশি হওয়ায় ডলার এনডোর্স করেননি। বিকেল পর্যন্ত
অপেক্ষা করেও সিদ্ধান্ত নেন ৯৭ টাকায় ডলার কিনবেন। তবে ততক্ষণে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টের
সুযোগ শেষ।
দিলারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামী
সপ্তাহে ভারতে যাব চিকিৎসার জন্য। সন্তান দুটোই ছোট.. বড়টার বয়সই ৬। কার কাছে রেখে
যাবো. তাই সবাই মিলেই যাব।”
বুধবার সময় ফুরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স
করিয়ে নেবেন বলে জানান তিনি।