ক্যাটাগরি

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে ছড়াচ্ছে বিরল রোগ মাঙ্কিপক্স

সাধারণ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাঙ্কিপক্স দেখা যায়। সেখান থেকে কীভাবে এ রোগ আমেরিকা ও ইউরোপ মহাদেশে পৌঁছে গেলো তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। সাধারণত ভ্রমণের মাধ্যমে ভাইরাস জনিত রোগ এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

বিবিসি জানায়, সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রে একজনের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এছাড়া, কানাডায় ১৩ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে তদন্ত করছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

পর্তুগাল এবং স্পেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যথাক্রমে পাঁচজন এবং সাতজনের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে।

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাস সংক্রমণ জনিত রোগ। সাধারণত এ রোগে শরীরে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয় এবং অধিকাংশ মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানায় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস।

এ ভাইরাস সহজে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। গণ সংক্রমণের ঝুঁকিও খুব কম।

যুক্তরাজ্যে গত ৭ মে প্রথম একজনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

যিনি সম্প্রতি নাইজেরিয়া ভ্রমণ করেছেন। ইংল্যান্ডে ফেরত যাওয়ার আগে তিনি ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হন বলে বিশ্বাস যুক্তরাজ্যের হেল্থ সিকিউরিটি এজেন্সির। এখন দেশটিতে নয় জনের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কীভাবে বাকিরা আক্রান্ত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে বলা হয়, দেখে মনে হচ্ছে তারা ‘স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত’ হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে এ রোগের খবর পাওয়ার পর ইউরোপের স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো থেকে সতর্কতা জারি করা হয়। তারপরই স্পেন এবং পর্তুগালে এর রোগ শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

আর সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য থেকে একজনের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি কানাডা ভ্রমণ করেছিলেন।

ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি ‘ভালো আছেন’ এবং ‘জনগণের জন্য কোনো ধরণের ঝুঁকির কারণ নন’ বলেও জানান স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

উপসর্গ:

এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ।

জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়।

এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কীভাবে ছড়ায়:

সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।

কবে প্রকোপ ঘটছে:

জানা যায়, এই রোগ প্রথম ছড়িয়েছিল একটি বানর থেকে। এরপর ১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার অন্তত ১০টি দেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।

চিকিৎসা:

এই ভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই। তবে যে কোন ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।

যেহেতু এ রোগ প্রাণঘাতী নয় তাই এটি নিয়ে উদ্বেগের তেমন কারণ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।