জেলায় এক সপ্তাহের বন্যায় ফসল,
রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও পুকুরসহ বিপুল সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা
প্রশাসন ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে। বন্যা কবলিত দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায় ২০ টন
করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ১০ টন করে ১৪০ টন চাল
বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জে
সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া নতুন
করে জেলা শহরের কয়েকটি পাড়া-মহল্লা প্লাবিত হয়।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার
প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাতক-দোয়ারাবাজার
সড়কের পানাইল সেতুর দুই দিকের সংযোগ সড়ক ঢলের তোড়ে ধসে গেছে।
তিনি জানান, ঢলের তীব্রতায় আরও
দুটি সেতু ধসে গেছে। এরমধ্যে রয়েছে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের
লামাগাঁও সেতু এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গজারিয়া রাবার ড্যামের সংযোগস্থল। রাবার ড্যামের
অফিস কক্ষও ধসে গেছে।
ছাতক ও দোয়রাজার উপজেলাসহ
তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ সদরে অন্তত ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিভিন্ন
অংশ ভেঙে গেছে বলেও এই প্রকৌশলী জানান।
বন্যা পরিস্থিতি বিলম্বিত হলে
এবং পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই প্রকৌশলী।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর
হোসেন বলেন, গবাদি পশুর জন্য দুটিসহ ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মানুষ আশ্রয় নিচ্ছেন।
আরও অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
“দুর্গতদের জন্য ১৪০ মেট্রিকটন
চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা বেশি ক্ষতি হওয়ায় প্রতিটিতে ২০
মেট্রিকটন চাল পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ১০টি উপজেলায় ১২ লাখ টাকা এবং এক হাজার
প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে।”
এ সময় জেলা প্রশাসক বন্যা পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল
বলেন, কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে ছাতক,
দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুরের অন্তত ৪০০টি পুকুরের ৩০ টন মাছ ও ২৭ লাখ
পোনা ভেসে গেছে। তাছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। এতে খামারিদের প্রায় দুই কোটি
টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এক সপ্তাহের ঢলে যেসব ফসলি ক্ষেত
ডুবে গেছে তা থেকে সহজে পানি নামার সুযোগ নেই। ৭৭৭ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান, ৭৫
হেক্টর বাদাম, আউশ বীজতলা ৭৪ হেক্টর, সবজি ৬০ হেক্টর ও ২০ হেক্টর আউশ ধান ডুবে
গেছে।
“তাছাড়াও অন্তত আট হাজার
হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা বাকি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে।”
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী
প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার
সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টা উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদ নদীতে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা
রয়েছে।