কর্মজীবী মানুষের প্রায় সবাই দিনের একটা
লম্বা সময় কাটান কম্পিউটারের সামনে, সামনের দিকে ঝুঁকে। এতে ঘাড় ব্যথা দেখা দেওয়াটা
খুবই স্বাভাবিক।
ঘাড় ব্যথা আরও অনেক কারণেই হতে পারে।
যেমন- মানসিক চাপ, আঘাত, ভুলভাবে বসা ও শোয়া।
ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইডে অবস্থিত
‘ম্যাসাজ এনভি’র ‘ম্যাসাজ থেরাপিস্ট অ্যান্ড লিড ম্যাসাজ ট্রেইনার’ জুয়ান গঞ্জালেস
বলেন, “মানসিক চাপ ও ব্যথা কমাতে নিজেই ঘাড় মালিশ করতে পারেন। তবে সেজন্য কৌশলটা জানা
জরুরি।”
সুইডিশ ম্যাসাজ
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
গঞ্জালেস বলেন, “এই কৌশলে মালিশ করা হয় আলতো ও ধীর ‘নিডিং মোশন’য়ে। মানসিক চাপ ও অস্বস্তি
দূর করার জন্য আরামদায়ক এই ম্যাসাজ অত্যন্ত কার্যকর। মানসিক চাপে থাকলে মানুষ নিজের
অজান্তেই ঘাড় ও কাঁধ কুচকে ফেলে, যা ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’য়ের কারণে হয়। এভাবে ঘাড়
ও কাঁধ কুচকে রাখার কারণে ব্যথা দেখা দেয়।”
“কোনো পেশাজীবীর কাছ থেকে ম্যাসাজ নেওয়া
সম্ভব না হলে নিজেই কাজটি করতে পারেন। মাথার পেছনে খুলির গোড়া আর ঘাড়ের উপরিভাগের মাঝখানে
আঙ্গুল বসিয়ে হালকা চাপ দিয়ে পিঠের দিকে যেতে হবে। একইভাবে কাঁধেও ম্যাসাজ করতে হবে।
সেটা শুরু হবে পিঠের উপরিভাগ থেকে কাঁধ পর্যন্ত।”
ট্রিগার পয়েন্ট থেরাপি
পেশিতে টান পড়ার ঘটনা যদি কারও সঙ্গে
প্রায়শই ঘটে, তবে তার জন্য ‘ট্রিগার পয়েন্ট থেরাপি’ উপযুক্ত।
গঞ্জালেসের ভাষায়, “এই ‘ট্রিগার পয়েন্ট’
হল শরীরে প্রচণ্ড অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, এমন একটি অংশ। পেশির ভেতর একটা আঁটসাঁট
মাংসপিণ্ড পাওয়া যায়, যাকে বলে ‘মাসল নটস’। সেখানেই এই ‘ট্রিগার পয়েন্ট থেরাপি’ প্রয়োগ
করা হয়। জায়গাটা সংবেদনশীল হওয়ার কারণে এই থেরাপিতে ব্যথা হয়।”
“প্রথম কাজ হবে ‘ট্রিগার পয়েন্ট’ খুঁজে
বের করা, যে জন্য বিশেষজ্ঞই হবেন নিরাপদ পছন্দ। এবার এর ওপর এমনভাবে চাপ দিন তা আপনাকে
ব্যথা দিলেও সহ্য করার মতো হয়। ১০ সেকেন্ড চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে। এবার চাপ আরেকটু
বাড়াতে হবে এবং আরও ১০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। একই মাত্রার চাপ ধরে রাখার কারণে ধীরে
ধীরে ওই ‘ট্রিগার পয়েন্ট’ শিথিল হয়ে আসবে, আরাম পাবেন।”
মায়োফ্যাশিয়ল রিলিজ
ম্যায়োফ্যাশিয়ল টিস্যু এক ধরনের ‘কানেক্টিভ
টিস্যু’ মানবদেহের প্রায় সকল পেশিকে আবৃত করে। ম্যায়োফ্যাশিয়ল রিলিজ ম্যাসাজ’য়ে হাতে
চাপ দিয়ে, ‘নিডিং’ পদ্ধতিতে এবং বিশেষ ব্যায়ামের মাধ্যমে এই টিস্যুকে শিথিল করা হয়।
অনেকগুলো ধরন আছে এই ম্যাসাজের। কোনোটায়
‘ফোম রোলার’ ব্যবহার হয়, কোনোটায় হাড়ের জোড়কে টানটান করা হয়, কখনও আবার ত্বক ও পেশি
টানটান করা হয়। ‘কাপিং থেরাপি’ও ব্যবহার করা হয় এই ম্যাসাজ পদ্ধতিতে।
হট স্টোন ম্যাসাজ
মসৃণ, সমতল ও গরম পাথর ব্যবহার হয় এই
পদ্ধতিতে যা ঘাড় ব্যথায় বেশ উপকারী।
গঞ্জালেস বলেন, “ত্বক ও পেশিকে শিথিল
করতে পারে তাপ। অত্যন্ত আরামদায়ক হয় এই ম্যাসাজ, যা আবার শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়,
পেশির টানটানভাব দূর করে, ব্যথা কমায়। ক্যান্সার, সিরোসিস, একজিমা, ব্রণ কিংবা শরীরের
কোথাও পুড়ে গেলে এই ধরনের ম্যাসাজ নেওয়া যাবে না।”
অ্যাসিস্টেড স্ট্রেচ থেরাপি
সাধারণ স্ট্রেচিং নয়। এটি হল, অন্য একজনের
সাহায্য নিয়ে স্ট্রেচিং।
গঞ্জালেস বলেন, “এই ম্যাসাজের লক্ষ্য
হল সেই পেশিগুলোকে লম্বা করা যেগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়া কিংবা বেকায়দায় ব্যবহার
হওয়ার কারণে ছোট হয়ে গেছে।”
খেলোয়াড়দের এই সমস্যা হতে দেখা যায় অনেক।
বিশেষত যারা একই ধারার শারীরিক পরিশ্রম প্রতিদিন করেন তাদের এই সমস্যা দেখা দেয় বেশি।
দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়া পর কোনো নির্দিষ্ট
নড়াচড়ার ক্ষমতা দমে যাওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে। যেমন- হাত, পা ভেঙে গেলে তা দীর্ঘদিন
বাধা থাকে, নাড়ানো যায় না।
এই ধরনের স্ট্রেচিং অভিজ্ঞদের সাহায্য
নিয়ে করা উচিত। নিজে করতে গেলে বিপত্তি বাড়তে পারে, নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুন