রিটার্নিং
কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামাগুলোর মধ্যে সবার চোখ সদ্য সাবেক
মেয়র মনিরুল হক সাক্কুরটিতে। দুই দফায় গত দশ বছর ধরে তিনি এই সিটির মেয়রের চেয়ারে
ছিলেন।
দলের সিদ্ধান্তের
বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মনিরুল হক সাক্কুকে বৃহস্পতিবার
বিএনপি দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।
সাক্কু কুমিল্লা
দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদকের পদে ছিলেন।
রিটার্নিং
কর্মকর্তার কাছে সাক্কুর দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, গত ৫ বছরে সাক্কুর নগদ টাকাসহ সম্পদ বেড়েছে প্রচুর।
সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্পদ বেড়েছে তার স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির। বেশিরভাগ
ক্ষেত্রেই সম্পদ বৃদ্ধিতে সাক্কুর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তার স্ত্রী।
সাক্কু এসএসসি পাস
করেছেন।
কুমিল্লা সিটির ২০১৭
সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বচনে সাক্কুর হাতে নগদ অর্থ ছিল ৮৭ লাখ ৭৭
হাজার ৩০৬ টাকা। এবার তার হাতে নগদ অর্থ আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা।
২০১২ সালের কুমিল্লা সিটির প্রথম নির্বাচনে সাক্কুর হাতে ছিল এক কোটি ১১ লাখ ৭৫
হাজার ৮৭৫ টাকা।
২০১২ সালের নির্বাচনের
সময় সাক্কুর স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলির নগদ টাকা ছিল দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৮ টাকা।
২০১৭ সালের নির্বাচনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫২৩ টাকা। এবার সাক্কুর
স্ত্রীর হাতে নগদ অর্থ আছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২১ টাকা।
স্থাবর সম্পদ
তালিকায় গত নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী সাক্কুর ঢাকায় বসুন্ধরায়
তিন কাঠা, মধুমতিতে পাঁচ কাঠা, স্বদেশ প্রপার্টিতে পাঁচ কাঠা করে দুটি প্লট ছিল।
এছাড়া কুমিল্লায় দশমিক ০১৬ একর, দশমিক ৪১৯৯ একর ও দশমিক ০৯২৩ একর অকৃষি জমি ও ৪,৬৯০
বর্গফুটের দোকান ও ফ্ল্যাট ছিল।
এবারের হলফনামায়
সাক্কু উল্লেখ করেছেন, যৌথ মালিকানাধীন ২০ একর কৃষিজমি (নিজ অংশ ১৭ ভাগের ২ ভাগ),
লালমাইয়ে ২৫০ শতক কৃষি জমি, বসুন্ধরায় তিন কাঠা, মধুমতিতে পাঁচ কাঠা, স্বদেশে পাঁচ
কাঠা করে দুটি প্লট, কুমিল্লা সদরের বজ্রপুরে যৌথ মালিকানাধীন ৬ এবং ১৭ শতকের দুটি
জমি (নিজ অংশ ১৭ ভাগের ২ ভাগ) রয়েছে তার। এছাড়া কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে ‘ফাতেমা
জাহানারা টাওয়ারে’ ১,৯৫০ বর্গফুট, ২৫৮ বর্গফুট, ১৯০ বর্গফুট, ১,৮৪০ বর্গফুটের
চারটি দোকান ও ১,৬৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। একই এলাকার সাত্তার খান
কমপ্লেক্সে একটি দোকান রয়েছে।
স্থাবর সম্পদ
তালিকায় গত নির্বাচনের সময় হলফনামায় সাক্কুর স্ত্রীর নামে কুমিল্লা নগরীর
রেইসকোর্স এলাকার ‘সেল নিশা’ টাওয়ারের দোতলায় ১২টি দোকান, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৭,২৫৬
বর্গফুটের ‘রেডরোফ ইন হোটেল’, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় দুটি ফ্ল্যাট, ‘ফাতেমা জাহানারা
টাওয়ারে’ ৩,২২৯ বর্গফুটের স্পেস রয়েছে বলে উল্লেখ ছিল।
এবারের হলফনামায়
উল্লেখ করা হয়েছে সাক্কুর স্ত্রীর নামে গাইবান্ধায় ১ দশমিক ২৩ একর কৃষি জমি,
বসুন্ধরায় ৩ কাঠার জমি, কুমিল্লা নগরীর ‘সেল নিশা টাওয়ারের’ তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ৭,২৫৬
বর্গফুটের ‘রেডরোফ ইন হোটেল’, একই ভবনে দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকার ধানমন্ডিতে দুটি
দোকান, কুমিল্লা সদরের বজ্রপুরে দশমিক ৫ একর ভিটি, একই এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল
ভবনে ১৭টি ফ্ল্যাট, ঢাকার শুলশানে ৩,৮২৭ বর্গফুট, ৩,৩৭৩ বর্গফুট, ৩,৩১৭ বর্গফুট ও
৩,৩৯০ বর্গফুটের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
গত নির্বাচনে
হলফনামায় সঞ্চয়পত্র বাবদ সাক্কুর ছিল দুই লাখ টাকা। এবার সেই সংখ্যা ৫০ লাখ। তার
স্ত্রীর এই খাতে গত নির্বাচনে ছিল ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এবার এই খাতে সাক্কুর
স্ত্রীর আছে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৪ টাকা।
বাড়ি ও দোকান ভাড়া
থেকে সাক্কুর বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৮ হাজার, তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার
৭৩৬ টাকা।
মেয়রের পদে থেকে
তার বার্ষিক আয় ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সাক্কুর স্ত্রী
ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েছেন ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া সাক্কুর ব্যাংকে জমা আছে ২
লাখ ৯৪ হাজার ২৭ টাকা, আর তার স্ত্রীর আছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৭ টাকা। দুজনের গাড়ি
আছে দুটি। দুজনের স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে। সাক্কুর পুঁজিবাজারে ২ লাখ টাকাসহ আরও
বেশ কিছু সম্পদের উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়।
সাক্কুর বিরুদ্ধে
বর্তমানে ঢাকার রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি এবং আয়কর অধ্যাদেশ আইনে
কুমিল্লায় একটি মামলা রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের আরও দশটি মামলা
থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন তিনি।
হলফনামায় সাক্কু
বলেছেন, তিনি পেশায় ঠিকাদার। তবে মেয়র থাকাকালে তিনি ঠিকাদারী কাজ করেননি।
এবার কুমিল্লা
সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সবকয়টিতে
আগামী ১৫ জুন ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৬ মে;
প্রতীক বরাদ্দ ২৭ মে।