ক্যাটাগরি

নাঈমের বিকল্প ভাবনায় কয়েকজন

ঢাকা
প্রিমিয়ার লিগে খেলার সময় তামিম ইকবালের ক‍্যাচ ধরার চেষ্টায় আঙুলে চোট পান মেহেদী
হাসান মিরাজ। প্রথম টেস্টের দলে তার জায়গায় নেওয়া হয় আরেক অফ স্পিনার নাঈমকে। এর জন‍্য
বেশি ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের। পরে অবশ‍্য ব‍্যাটিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেনকেও
দলে যুক্ত করা হয়। তার ব‍্যাটিং নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, তবে লাল বলে কতটা কার্যকর
হবে তার অফ স্পিন, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ড্র
হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া নাঈম পরের ইনিংসে বোলিং করেন ভাঙা
আঙুল নিয়ে। তাই ততটা কার্যকর ছিলেন না তিনি, পাননি কোনো উইকেটও।

প্রধান
নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেই চোটের জন‍্য মিরপুর
টেস্টে খেলা হবে না নাঈমের।

“এখনও
আমরা কারও নাম ঘোষণা করিনি। দল ঢাকায় ফিরুক, এরপর আলোচনা করে দুয়েক দিনের মধ‍্যে
নাম ঘোষণা করা হবে। কয়েক জনের নাম ভাবনায় আছে।” 

মিরাজের
বিকল্প নাঈম। এরপর? বড় দৈর্ঘ‍্যের ক্রিকেটের বিবেচনায় অফ স্পিনের পাইপলাইন বলতে গেলে
শূন‍্য। সবশেষ ঘোষিত এইচপি দলে নেই বিশেষজ্ঞ কোনো অফ স্পিনার। দুই লেগ স্পিনারের
সঙ্গে আছেন দুই বাঁহাতি স্পিনার। কেবল অফ স্পিন দিয়েই দলে ঢুকতে পারেন, এমন ক্রিকেটার
খুব কমই আছেন বাংলাদেশে।

দেশে
অফ স্পিনারের কমতি নেই। তবে তাদের প্রায় সবাই মূলত ব‍্যাটসম‍্যান। বেশিরভাগই মোসাদ্দেকের
মতো ব‍্যাটিং অলরাউন্ডার।

এই
শূন‍্যতা পূরণে একটা সময় সম্ভাবনায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন সোহাগ গাজী। কিন্তু বোলিং
অ‍্যাকশন শুধরানোর পর তার বোলিংয়ে নেই আগের ধার। বড় দৈর্ঘ‍্যের ক্রিকেটের দুই টুর্নামেন্ট
জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে রাখতে পারেননি উন্নতির চাপ। ২০১৫ সালে সবশেষ
দেশের হয়ে খেলা এই অফ স্পিনার এরপর কখনও জাতীয় দলের আশেপাশে আসতে পারেননি।

৩৫
বছর বয়সী অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার শরিফউল্লাহ ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সফল। তবে তাকে ও নাহিদুল
ইসলামকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেই বেশি কার্যকর ভাবা হয়। তারাও সেভাবে কখনও জাতীয় দলের
জন‍্য বিবেচনায় আসেননি।

আরেক
অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত। টেস্টের জন‍্য এখনও সেভাবে
বিবেচনা করা হয় না তাকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৪ ম‍্যাচে নিয়েছেন ৯৪ উইকেট।

এদের
সবার মাঝে বড় দৈর্ঘ‍্যের ক্রিকেটের দুই টুর্নামেন্ট জাতীয় লিগ ও বিসিএলের সবশেষ আসরে
যেমন কেটেছে, তাতে জাতীয় দলে আরেকটি সুযোগ আশা করতেই পারেন শুভাগত। ৩৫ বছর বয়সী অফ
স্পিনিং অলরাউন্ডার অসাধারণ একজন ফিল্ডারও।

এবারের
বিসিএলের ফাইনালে বলতে গেলে একাই জেতান ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলকে। দুই ইনিংসেই করেন সেঞ্চুরি,
এক ইনিসে বোলিং করে ৫১ রানে নেন ৩ উইকেট। ম‍্যাচের চতুর্থ ইনিংস সেঞ্চুরি বাংলাদেশের
ব‍্যাটসম‍্যানদের জন‍্য বেশ বিরল। সেখানে তিনি খেলেন অপরাজিত ১১৪ রানের ম‍্যাচ জেতানো
ইনিংস।

২১৮
রান তাড়ায় ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে এনে দেন ৪ উইকেটের জয়। ১২১ বলের
ইনিংসে দুই ছক্কার সঙ্গে ছিল ১৩টি চার।

বিসিএলে
৪ ম‍্যাচের ৬ ইনিংসে তিন সেঞ্চুরিতে ১০০ গড়ে করেন ৪০০ রান। অফ স্পিনে ৫৪.৩৩ গড়ে নেন
৬ উইকেট।

জাতীয়
লিগের শেষ ম‍্যাচেও ঢাকা বিভাগের হয়ে আলো ছড়ান শুভাগত। ২১ ও ৩৩ রানের ছোট কিন্তু
কার্যকর দুটি ইনিংস খেলা এই অলরাউন্ডার দারুণ বোলিংয়ে দলকে এনে দেন শিরোপা। প্রথম
ইনিংসে ৪৮ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬ রানে নেন ৩টি।

এই
টুর্নামেন্ট জুড়ে বল হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন শুভাগত। ৬ ম‍্যাচের ৭ ইনিংসে বোলিং করে
১৭.৭০ গড় ও ৪৪.৬ স্ট্রাইক রেটে নেন ২০ উইকেট। পাঁচ ও ১০ উইকেট নেন একবার করে।

সব
মিলিয়ে লাল বলে মৌসুম কেটেছে দুর্দান্ত। ৫৯.১৮ গড়ে করেছেন ৬৫১ রান। তিন সেঞ্চুরির
পাশে ফিফটি তিনটি। সর্বোচ্চ ১৫২। ২৬.১৫ গড়ে নিয়েছেন ২৬ উইকেট।

প্রথম
শ্রেণির ক্রিকেটে ১০৬ ম‍্যাচে ৩৯.৯৯ গড়ে তার রান ৫ হাজার ৯১৯। ১৬ সেঞ্চুরির পাশে ফিফটি
৩২টি। লোয়ার অর্ডার ব‍্যাটসম‍্যানদের নিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ‍্য আছে পুরোপুরি।

২০১৪
থেকে ২০১৬ সালের মধ‍্যে দেশের হয়ে খেলা ৮ টেস্টে এক ফিফটিতে করেন ২৪৪ রান। ৬৩.২৫ গড়ে
নেন ৮ উইকেট।

এরপর
বেশ উন্নতি করেছেন বোলিং ও ব্যাটিংয়ে। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পরের বছর দক্ষিণাঞ্চলের
বিপক্ষে এক ম‍্যাচে সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছিলেন ফিফটি, মধ‍্যাঞ্চলের হয়ে প্রথম ইনিংসে
ছয় উইকেট নেওয়ার পর নেন আরও চারটি।

সব
মিলিয়ে এক যুগের ক‍্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০.৩২ গড় ও ৫৮.৪ স্ট্রাইক রেটে
নিয়েছেন ২৩৯ উইকেট। ৫ উইকেট নিয়েছেন আটবার, ১০ উইকেট দুইবার।

দেশের
হয়ে সবশেষ টেস্ট খেলার পর অনেকবারই ঘরোয়া ক্রিকেটে ব‍্যাটে-বলে নিজের সামর্থ‍্য দেখিয়েছেন
শুভাগত। কিন্তু এরপরও নির্বাচকদের বিবেচনায় আসেননি কখনও। মিরাজের পর নাঈমও ছিটকে যাওয়ায়
বিবেচনায় আসতেই পারেন তিনি।