শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর স্ট্র্যান্ড রোডে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ অনুদান দেওয়া হয়।
বিএমএমওএ সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেনসহ সংগঠনের নেতারা হাদিসুরের ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সের হাতে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে বিএমএমওএ নেতা শাখাওয়াত বলেন,
“ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইটিএফ) এবং বাংলাদেশি মেরিনারদের পক্ষ থেকে হাদিসুরের পরিবারের জন্য এই আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএমওএ’র পক্ষে দুটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে প্রকাশ এবং হাদিসুর রহমানের পরিবারকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।
বিএসসি’র জাহাজ পরিচালনায় ‘গাফিলতি’
তদন্তে গেল ৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে করে বিএমএমওএ যে দাবি জানিয়েছিল তা পূরণ করা হয়নি দাবি করে সংগঠনের সম্পাদক শাখাওয়াত বলেন, “সংগঠনের দুজন প্রতিনিধিকে অর্ন্তভুক্ত করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেখানে বিএমএমওএ’র কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি।
“৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও আমরা এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি।”
হাদিসুর রহমান
হাদিসুর রহমানের পরিবারকে বিএসসি’র তরফে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জানা মতে, ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়াটি বিএসসির অধীনে চলমান আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের কোনো সুস্পষ্ট দিন ঘোষণা করেনি বিএসসি।
“আমরা মনে করি,
অনেক আগেই এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যেত।”
বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে হাদিসুর ছিলেন মেজ। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে পড়ালেখা শেষ করে ২০১৮ সালে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে ওঠেন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।
ইউক্রেইন থেকে রোমানিয়ার পথে হাদিসুরের কফিন
বাড়ি ফেরার বড় তাড়া ছিল বাংলার সমৃদ্ধির প্রকৌশলী হাদিসুরের
ইউক্রেইনের ওলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা অবস্থায় ২ মার্চ রকেট হামলার শিকার হয় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। তাতে নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।
৩ মার্চ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকদের বাংলার সমৃদ্ধি থেকে নামিয়ে আনা হয়। সেখান থেকে একটি শেল্টার হাউজের বাংকারে ঠাঁই নেন নাবিকরা। হাদিসুরের মরদেহও রাখা হয়েছিল বাংকারের ফ্রিজারে।
উদ্ধার পাওয়ার পর জীবিত ২৮ নাবিক রোমানিয়া হয়ে ৯ মার্চ দেশে পৌঁছান। সবশেষ ১৪ মার্চ হাদিসুরের মরদেহ দেশে পৌঁছায়।