অর্থনীতিবিদরা প্রত্যাশা করছেন ঈদ-উল আযহা (কুরবানির
ঈদ) ঘনিয়ে আসলে এ ধারা আরো বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মে মাসের ১২ তারিখ
পর্যন্ত দেশে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৮৩৬ দশমিক ১৯ মিলিয়ন বা ৮৩ কোটি ৬১ লাখ
ডলার।
গড় হিসাবে এই সময়ে দৈনিক রেমিটেন্স এসেছে ৬৯ দশমিক
৬৮ মিলিয়ন ডলার। গত এপ্রিলে দৈনিক গড় রেমিটেন্স প্রবাহ ছিল ৬৬ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে দৈনিক গড়ে ২
দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বা ২ লাখ ৬৯ হাজার ডলার বেশি আসতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের
আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব থাকা
স্বত্বেও প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর ধারা ইতিবাচক রয়েছে।”
রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে কিছুটা… এতে প্রবাসীরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন। আর প্রণোদনা দেওয়ায় ব্যাংকিং
চ্যানেলেই বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন।
“ব্যাংকে রেমিটেন্স পাঠানোয় সরকার সুবিধা দেওয়ায় তারা বেশি টাকা পাচ্ছেন
আগের চেয়ে। সামনে কোরবানির ঈদ… সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি এ উপলক্ষে রেমিটেন্সের
ধারা আরও বেগবান হবে।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের
সময়েও বাংলাদেশের রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক মুদ্রার
রিজার্ভে তেমন একটা চাপ অনুভূত হচ্ছে না।
মহামারীর ধাক্কা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী
পাঠানা শুরু হওয়ার কারণেও রেমিটেন্সে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের
শেষ দিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করায় প্রবাসীদের বিদেশ গমন ফের গতি পাচ্ছে।
এর ফলে বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালি থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ চলতি বছরের
প্রথম প্রান্তিকে আগের চেয়ে বেড়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের
তথ্যর উৎস দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩ লাখ ২২ হাজার
৫৮৩ জন বিদেশে গেছেন। যার ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশই সৌদি আরবে।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ জায়েদ
বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামারী হতে মুক্ত হতে চলেছে বিশ্ব। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড
আগের জায়গায় ফিরতে শুরু করেছে।
“আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা এখন আগের চেয়েও বেশি
রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন।”
আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন যারা যাচ্ছেন… তারাও সামনের ঈদ উপলক্ষ করে রেমিটেন্স পাঠাবেন।
ডলারের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ব্যাংকিং চ্যানেলেই বেশি রেমিটেন্স আসবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ
প্রান্তিকে ৫০৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৪
দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
এই সময়ে সর্বোচ্চ ১০৫ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স
এসেছে সৌদি আরব থেকে; যা মোট রেমিটেন্সের ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্য
থেকে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, আরব আমিরাত থেকে ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ ও কুয়েত থেকে ৭ দশমিক ৮৩
শতাংশ।
এদিকে গত সপ্তাহে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের
) বড় একটি দায় পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের কাছেই রয়েছে।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে
বেশি রেমিটেন্স এসেছে। চলতি মে মাসের প্রথম ১২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে
এসেছে ১১৫ মিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭০৫ দশমিক ৫৬
মিলিয়ন, বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ও বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে
এসেছে ৩ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার।
গত মাসে প্রাবসীরা দেশে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন
২০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছে দেশে
১ হাজার ৭৩০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরে এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। ২০১৯-২০২০
অর্থবছরে এসেছে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ছিল ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি দেখা
গিয়েছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
দেশে আসা এ পরিমাণ রেমিটেন্স দিয়ে আমদানি দায়ের ৪০ দশমিক ৮৩ পরিশোধ সম্ভব ছিল; এদিকে
এটি রপ্তানি আয়ের ৬৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।