শনিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু
আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে (বিআইসিসি) গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের
(পিপি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, “এখানে আপনারা যারা পিপি ও জিপি মহোদয়রা আছেন তাদের কাছে অনুরোধ যে, ডিজিটাল
সিকিউরিটি অ্যাক্টে যদি কোনো মামলা হয়, তাহলে দয়া করে আপনারা আগে খুঁজে বের করুন যে
,ওইটা আদৌ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয় কি না। যদি না হয় তাহলে আপনারা সেইভাবে
পদক্ষেপ নিবেন।”
তিনি বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বসেছি এবং বলেছি আগে ডিজিটাল সিকিউরিটি
অ্যাক্টে মামলা হলে আগে সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করা হতো। এখন এই আইনে মামলা করার সঙ্গে
সঙ্গে যাতে কাউকে অ্যারেস্ট না করা হয়।
“তবে মামলা এস্টাবলিশ হলে বা কোর্ট যদি মনে করে যে
এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে, তাহলে সেই রকম পদক্ষেপ নেবে। আর যদি মনে করে যে, না
সমন জারি করলেই যথেষ্ট তাহলে সমন জারি করবে।
“কিন্তু তাই বলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এই আইন
বাতিল প্রজেক্ট হবে এটাও কোনওভাবে আমি সমর্থন করব না।”
দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯
সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
আইনটি কার্যকর
করার পর থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এর অপপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে।
আইনমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয় নাই।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যা হচ্ছে সাইবার
ক্রাইম।
“আমাদেরকে এই সাইবার ক্রাইমও মোকাবেলা করতে হবে। এখন পেনাল কোডের অনেক অপরাধ আছে যেগুলি আর ফিজিক্যালি করা হয় না, কম্পিউটারের
মাধ্যমে করা হয়।
“তখন বিচারক বলবেন যে ওনিতো শারিরীকভাবে এই অপরাধ
করেন নাই। অথচ অপরাধও মোকাবেলা করতে হবে। আমরা সে জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি।”
আনিসুল হক বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হওয়ার পর কিছু মিস ইউজ এবং এবিউজ যে হয় নাই
তাতো না।”
এসময় তিনি ১৯৭৪ সালে বিশেষ নিরাপত্তা
আইন করার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “তখন খাদ্যের যখন ইয়ে হতো… মানুষ স্মাগলিং করতো। তখন প্রচলতি কাস্টমস আইন ১৫৬ ধারা দিয়ে কিন্তু
এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছিল না।”
তারই প্রেক্ষিতে স্পেশাল অ্যাক্ট ২৫
বি, সেকশন ১৫, সেকশন ২, সেকশন ৩, সেকশন ১০
ডিটেনশন আইনগুলি করা হয় বলে জানান আইনমন্ত্রী।
“এখনও কিন্তু সেই স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট বেঁচে আছে।
এই আইনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু আজকে একটা
কেইসও ডিটেনশনের নাই। কিন্তু স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্টতো আছে।”
এসময় তিনি স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট
কী খারাপ আইন কি না এই প্রশ্ন তুলে বলেন, “এটার ব্যবহার আপনারা কীভাবে করবেন তা বলে দেয় আপনাদের
উদ্দেশ্যটা কী?”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্দে
প্রতিবাদের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “এই প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমি জাতিসংঘের
হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস এর বিশেষজ্ঞদের সাথে বসলাম। তাদের বিশেষজ্ঞদের সাথে আমাদের
বিশেষজ্ঞদের বৈঠকের ব্যবস্থা করে এই আইনের সুন্দর চর্চা কীভাবে করা যায় তা খুঁজে বের
করতে।”
তিনি বলেন, “এর আগে ৫৭ ধারার জন্য একটি বিশেষ সেল ছিল। ওই ধারায় কোনও মামলা হলে তা
আগে সেই সেল দেখবে। এরপর সেল যদি মনে করে যে অপরাধের ধরন মামলা হওয়ার মতো, তাহলে মামলাটা
হবে, না হলে হবে না।”
সরকারি কৌঁসুলিদের সঙ্গে এ মতবিনিময়
সভায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে জিপি এবং পিপি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের
সম্পৃক্ত করার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, “সংসদ সদস্যরা যদি ওপিনিয়ন না দিতে পারেন কাকে জিপি, পিপি করা হবে? তাহলে
এমপি সাহেবকে তো কেউ পাত্তা দেবে না।
তাদের সম্পৃক্ত করাতে কাজ ভালই হচ্ছে।”
এসময় তিনি ধর্ষণ মামলায় কোনো নারীকে
চরিত্র নিয়ে জেরা করার উপধারা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।
মামলা জট নিরসন নিয়ে এ মতবিনিময় সভায়
বিভিন্ন জেলার পিপি ও জিপিরা সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণেই দেশে মামলা জট বেশি হচ্ছে
বলে জানান।
আরও পড়ুন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেন, বললেন প্রধানমন্ত্রী