তবে তদন্তের স্বার্থে এখন পরিকল্পনাকারীর
সংখ্যাসহ এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারছেন না বলে তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া জানান।
এই হত্যাকাণ্ডের
ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার একদিন আগে শনিবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
গত বছরের
২২ নভেম্বর কুমিল্লা নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে
গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ কর্মী
হরিপদ সাহা (৫৫)। সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগের সভাপতি ছিলেন। হরিপদ সাহা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
আলোচিত
এই জোড়া খুনের ঘটনার শুরু থেকেই নিহত সোহেলের পরিবারের সদস্যরা বলে আসছেন, পেছন থেকে
কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইন্ধন, অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করিয়েছে।
ঘটনার ছয়
মাস পার হলেও পেছনের পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন
সোহেলের পরিবারের সদস্যরা।
এর আগে
তদন্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া বলেছিলেন হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেউ আছেন বলে জানতে পেরেছেন।
শনিবার
সন্ধ্যায় মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরই মধ্যে খুনের পরিকল্পনায় যে বা যারাই আছে তাদের শনাক্ত
করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন পরিকল্পনাকারীর সংখ্যাসহ এই বিষয়ে বিস্তারিত
কিছুই বলতে পারব না। আশা করছি তদন্ত শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার
হবেন।”
চাঞ্চল্যকর
এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সবকিছু শেষ হলেই আদালতে
অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। এজন্য আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।”
মঞ্জুর
কাদের আরও বলেন, “নিহতদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এরই মধ্যে হাতে পেয়েছি। বন্দুকযুদ্ধে
নিহতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালাস্টিক রির্পোটও
হাতে পেয়েছি। সবকিছু ম্যাচিং করেছে। গুলি তারাই চালিয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে।”
গত বছরের
২২ নভেম্বর এই হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন [২৩ নভেম্বর] রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই
সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে
কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সাত
দিন পর পুলিশ জানিয়েছিল, সোহেল ও হরিপদকে গুলি করে হত্যার সময় হিট স্কোয়াডে ছিল ৬ হামলাকারী।
এদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম,
৩ নম্বর আসামি সাব্বির সোহেন ও ৫ নম্বর আসামি মো. সাজন। আর মামলার ২ নম্বর আসামি জেল
সোহেল, এজাহারবহির্ভূত পিচ্চি নাজিম ও অস্ত্র সরবরাহকারী রিশাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দিয়ে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
এই জোড়া
খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাত জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এই মামলায় এখন
পর্যন্ত এজাহারনামীয় সাত জন ও সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এখনও পলাতক রয়েছেন ১১ নম্বর আসামি রনি।
শনিবার
সন্ধ্যায় কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন বলেন, “আমাদের দুঃখ
একটাই, ঘটনার ৬ মাস পার হলো, অথচ এখনও পেছনের হোতাদের নামটা জানতে পারলাম না। পুলিশ
চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সকল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারে।”
তিনি পরিকল্পনাকারীদের
গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
নিহত কাউন্সিলর
সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো. নাদিম বলেন, “দুই দিন আগেও রুমন চাচাসহ মামলার
তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছি। তাকে বারবার অনুরোধ করেছি পেছনে থাকা ব্যক্তিদের
সামনে আনেন। তিনি বলেছেন, তদন্তের জন্য আরও সময় লাগবে।”
নাদিম আরও
বলেন, “আমরা আর কত অপেক্ষা করব? খুনের পরিকল্পকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, এজন্য
আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। শুধু আমাদের পরিবারই নয়, কুমিল্লা নগরীর সর্বস্তরের মানুষ
জানতে চায় কারা অর্থ ও ইন্ধন দিয়ে এই জোড়া খুন করিয়েছে।”
আরও পড়ুন:
কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: ‘পেছনে জড়িতদের সামনে আনা হবে’
কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ পরিবারের
কুমিল্লায় কাউন্সিলর সোহেল হত্যা: ৬ হামলাকারীকে শনাক্ত
কুমিল্লায় কাউন্সিলর সোহেল হত্যায় আরও ২
জন গ্রেপ্তার
কুমিল্লায় অফিসে ঢুকে কাউন্সিলরসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: আধা কিলোমিটার দূরে মিলল
অস্ত্র ও গুলি
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: ‘মাদক ব্যবসায়ীসহ’
আসামি ২১
কুমিল্লায় কাউন্সিলর হত্যা: আরও এক আসামি গ্রেপ্তার