ক্যাটাগরি

চার জেলায় ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি, ২ জনের মৃত্যু

শনিবার ভোরের দিকে বয়ে যাওয়া ঝড়বৃষ্টিতে ধান, আমসহ অন্যান্য ফসলের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি উপড়ে পড়েছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি।

মারা গেছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন (৪৫) ও ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কুলচারা গ্রামের গোলাম নবীর স্ত্রী রূপসী বেগম (৫০)।

ঝিনাইদহে শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, সকালে কুলচারা গ্রামের কৃষক গোলাম নবী ও তার স্ত্রী রূপসী বেগম বাড়ির পাশে ক্ষেতে বেগুন তুলতে যান। এ সময় ঝড়বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে তারা আহত হন। ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলে  গ্রামের অন্যরা মাঠে গিয়ে তাদের অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। তারা তাদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রূপসী বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোলাম নবীকে একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওসি।

তাছাড়া সদর উপজেলার ডেফলবাড়িয়া গ্রামে বজ্রপাতে গোয়ালঘরে থাকা দুটি মহিষ মারা গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বাড়িঘর, আম, কলা ও অন্যাস ফসল, বিদ্যুতের খুঁটি ও  গাছপালা ভেঙে গেছে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশিদ জানান, দুপুরে বৃষ্টির সময় বাড়ির পাশের জমিতে গরু আনার জন্য বের হন আলতাফ। এ সময় সেখানে বজ্রপাত হলে তিনি আহত হন। পরিবারের লোকজন তাকে দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নওগাঁয় ঝড়-বৃষ্টিতে উড়ে গেছে অনেক ঘরের চাল। তাছাড়া আম ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামশুল ওয়াদুদ জানান, ঝড়ে এ জেলায় সাত হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমির আম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলার পোরশা উপজেলার  নিতপুরের মাহবুবুল আলম জানান, এর আগে তিন দফা ঝড়ের পর যে আম অবশিষ্ট ছিল, তারও প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শনিবারের ঝড়ে পড়ে গেছে। এবারে এই প্রাকৃতিক দুর্গের কারণে পোরশাসহ জেলার আম চাষিরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

“শুধু আমই না, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে ধান ও  অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।”

ধামইরহাট ও সাপাহার উপজেলার চাষিরা একই রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে অনেক এলাকার জনজীবন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় ঝড়ের তাণ্ডবে শত শত গাছপালা ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। শত শত হেক্টর জমির আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে তার ছিঁড়ে গেছে।

গাছ ভেঙে রেললাইনের ওপর পড়ায় পোড়াদহ-খুলনা পথে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে বলে জানান পোড়াদহ জংশনের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার সাদাত।

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. জানে আলম জানান, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

মিরপুর উপজেলার খয়েরপুর গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, তার সাড়ে তিন বিঘা কলাক্ষেতের গাছ উপড়ে পড়েছে এবং ভেঙে গেছে।

“এই কলাবাগান প্রস্তুত করতে আমার দেড় লাখ টাকা খরচ হয়।”

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় ঝড়ের মাত্রা কিছুটা কম থাকলেও মিরপুর, ভেড়ামাড়া, দৌলতপুর ও সদর উপজেলার অধিকাংশই আক্রান্ত হয় বলে জানান কুমারখালী আবহাওয়া দপ্তরের ইনচার্জ মামুন অর রশিদ।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, “ঝড়ে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও উঠতি ধানের ক্ষেতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।”

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।