গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে
২৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী
পার্থ প্রতিম সাহা জানান।
তিনি আরও বলেন, “পদ্মায় এই সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে
পানি বেড়েছে। এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। সাত
দিনে দুই মিটার পানি বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এভাবে
বাড়তে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এতে পদ্মা, মধুমতি
ও আড়িয়াল খার নিম্নাঞ্চলের (চরাঞ্চলের) ফসলের ক্ষেত তলাতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ভাঙন
দেখা দিয়েছে নদীতে।
জেলার চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধানের ক্ষেতে
পানি প্রবেশ করছে। ফলে কৃষক অপরিপক্ক ফসল বাধ্য হয়ে তুলে ফেলছেন।
ফরিদপুরে নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ডুবছে ক্ষেতের ফসল।
রোববার দুপুরে সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে
গেছে। চাষিরা অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন। এ ছাড়া ধান ও তিল তুলতে দেখা যায়। নদীর অপরপ্রান্তেও
তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত।
পালডাঙ্গি এলাকার চাষি রমজান আলী ভূঁইয়া
বলেন, “আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। চার-পাঁচ দিন ধরে পদ্মার পানি বাড়ায় সব জমির
বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ক হয়ে যেত। কিন্তু এখন বাদাম
তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম এখনও পরিপক্ক হয়নি। তুলে নিয়ে গরু, ছাগলকে খাওয়াব। অনেক
ক্ষতি হয়ে গেল।”
আরেক কৃষাণী সুফিয়া বেগম বলেন, “এক একর জমিতে
বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের
সারা বছরের সংসার খরচ চলে। কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেল। গত কয়েকদিন ধরে পদ্মার পানি
বাড়ায় অপরিপক্ক বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করা
যাবে না।“
চাষি শেখ জুলমত হোসেন ১০ বিঘা জমিতে বাদাম
ও তিল আবাদ করেছিলেন। আর মাত্র ১০ দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে উঠাতে পারতেন। পানি বাড়ার
ফলে এখনই তুলে ফেলতে হচ্ছে।
“শুধু আমাদের এলাকা নয়, চরাঞ্চলের ১০০ একরের
বেশি জমিতে লাগানো বাদাম, তিল ও ধান নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।”
ফরিদপুরে নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধানের ক্ষেতে পানি ঢুকছে। তাই কৃষক অপরিপক্ক ফসলই তুলতে বাধ্য হচ্ছে।
চাষি মুরাদ হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের
জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই
সারা বছরের সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেল।
তিনি মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি
হাসান মিন্টু বলেন, “আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ
বাসিন্দাই বাদাম চাষ করেন। তাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।”
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়
থেকে জানা যায়, জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া
পাঁচ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে।
এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর কার্যালয়ের
উপ-পরিচালক মো. হযরত আলী বলেন, “হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বেড়ে বাদাম, তিল ও ধানের কিছু
ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি আসার কারণে অপরিপক্ক বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে
সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান উপ-পরিচালক।