কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলের আজভস্তালে
ইউক্রেইনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের পর রাশিয়াকে এখন দনবাসের দুটি প্রদেশের একটি লুহানস্কে
অভিযানের তীব্রতা বাড়াতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ নামার আগেই লুহানস্ক
ও প্রতিবেশী দোনেৎস্কের বিশাল অংশ রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে ছিল; রাশিয়া
এখন ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাকি অংশটুকুও কব্জা করতে চায়।
“দনবাসের পরিস্থিতি খুবই জটিল। রুশ সেনাবাহিনী স্লোভিয়ানস্ক
ও সিভেরদোনেৎস্কে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু ইউক্রেইনের বাহিনী তাদের অগ্রযাত্রা
আটকে রেখেছে,” বলেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এর আগে তিনি স্থানীয় টেলিভিশনকে বলেছিলেন, সংঘাত রক্তাক্ত হতে পারে কিন্তু
তার সমাপ্তি একমাত্র কূটনীতির মাধ্যমেই সম্ভব।
ইউক্রেইন ভূখণ্ডে রাশিয়ার দখলদারিত্ব সাময়িক বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন।
এদিকে জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতিতে
রাজি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হয়, মস্কোর সঙ্গে এমন চুক্তি
মানবে না কিইভ।
রাশিয়াকে ছাড় দিলে তা ‘ব্যকফায়ার’ করতে পারে জানিয়ে
তিনি বলেন, বিরতির পর রাশিয়া আরও তীব্র আক্রমণ শানাতে পারে।
“ছাড় দিলেও যুদ্ধ থামবে না। কিছু সময়ের জন্য স্থগিত
থাকতে পারে। তারা নতুন আত্রমণ শুরু করবে, যা আরও রক্তাক্ত, আরও বড় আকারের হবে,” সুরক্ষিত প্রেসিডেন্সিয়াল
কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন ইউক্রেইনের এই প্রধান মধ্যস্থতাকারী।
সম্প্রতি যারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগিও আছেন।
ফেব্রুয়ারিতে অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত রাশিয়ার দখলে যাওয়া সবচেয়ে
বড় শহর মারিউপোলে ইউক্রেইনের সেনাদের আত্মসমর্পণ দনবাস দখলে মস্কোর আকাঙ্ক্ষাকে আরও
জোরদার করতে পারে। এটি তিন মাসের যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিরল এক
জয়ও এনে দিয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, শুক্রবারই মারিউপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় আটকা
ইউক্রেইনীয় সেনাদের শেষ অংশও আত্মসমর্পণ করেছে।
ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় এ বন্দরনগরীর পুরো নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে মূল
ভূখণ্ড ও রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো থেকে
স্থল পথে ক্রাইমিয়া যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।
শনিবার লুহানস্ক ও দোনেৎস্কে থাকা ইউক্রেইনীয় বাহিনী জানিয়েছে, দনবাসে
হামলার তীব্রতা বাড়ার মধ্যেই তারা একদিনে রুশ বাহিনীর ৯টি আক্রমণ প্রতিহত করেছে; ধ্বংস
করেছে ৫টি ট্যাংক ও ১০টি সাঁজোয়া যান।
বিমান, কামান, ট্যাংক, রকেট, মর্টার ও ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে রুশ বাহিনী
বেসামরিক স্থাপনা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে বলেও ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে
অভিযোগ করেছে।
লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি গাইদাই বলেছেন, রুশ বাহিনী সিভেরস্কি
দোনেৎস নদীর ওপর সিভেরদোনেৎস্ক ও লিসিচেন্সকের মধ্যে থাকা একটি সেতু গুড়িয়ে দিয়েছে।
“সিভেরদোনেৎস্কের উপকণ্ঠে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লড়াই
চলেছে,” মেসেজিং অ্যাপ
টেলিগ্রামে বলেছেন তিনি।
সিভেরস্কি নদীর পারে অবস্থিত সিভেরদোনেৎস্ক ও লিসিচেন্সক থেকে ইউক্রেইনের
বাহিনীকে হঠাতে রাশিয়া মধ্য এপ্রিল থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে।