চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় দেশের উন্নয়নের জন্য চলতি অর্থবছর সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে তাতে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৫৫ শতাংশের কিছু বেশি বরাদ্দ ব্যয় হয়েছে বলে হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে।
টাকার অংকে এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাস্তবায়নের এর হার গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৫৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।
মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: বিদ্যুৎ বিভাগ
গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপির এ বাস্তবায়ন হার গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ৪৯ শতাংশ। টাকার অংকে যা ছিল এক লাখ ২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি গ্রহণ করে। পরে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
তবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার এডিপি চলমান রয়েছে।
আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের তুলনায় বৈদেশিক সহায়তা বা প্রকল্প সহায়তার অর্থ ব্যয়ের হার বেশি।
এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫৩ শতাংশ এবং বৈদেশিক অর্থায়ন থেকে প্রায় ৫৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে।
অথচ এর আগের বছরগুলোতে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হার কম হতো। বিভিন্ন সময়ে বৈদেশিক ঋণের নানা ধরনের শর্তের কারণে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার কম হয় বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। এবার সেই ধারা ভেঙে বৈদেশিক অর্থ ছাড় থেকে বেশি হারে ব্যয় হয়েছে।
নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে
এ প্রবণতাকে ইতিবাচক বর্ণনা করে তা ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা আবাসিক কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
ফাইল ছবি
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পের অগ্রগতি বাড়ানো। কারণ প্রকল্পের জন্য যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় সেটা যদি প্রকল্প সহায়তা থেকে মেটানো যায় তাহলে তা আমাদের রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বে না।”
“বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন যত বাড়ানো সম্ভব হবে বৈদেশিক অর্থের ছাড় ততই বাড়বে,” যোগ করেন তিনি।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থব্ছরের প্রথম ১০ মাসে বরাদ্দের দিক দিয়ে বড় ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গড় বাস্তবায়ন মোট বাস্তবায়ন হারের চাইতে বেশ কিছুটা বেশি।
এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১ শতাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৬১ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এরপর যথাক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৬১ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ৬০ দশমিক ৩১ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রায় ৫৫ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৫৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং সেতু বিভাগ প্রায় ৫১ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করতে পেরেছে।