দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে এ বিষয়ে
সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন)
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন।
রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
ডটকমকে তিনি বলেন, “নতুন কোনো রোগের তথ্য পাওয়া গেলে আমাদের বন্দরগুলোতে সতর্কতা
জারি করা একটা রুটিন ওয়ার্ক। সে হিসেবে আমরা সবগুলো বন্দরকে সতর্কতা নেওয়ার জন্য
বলেছি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি
জানানো হয়েছে।”
ঢাকার হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাস্থ্য
কর্মকর্তা, সিলেটের সিভিল সার্জন এবং আন্তর্জাতিক বন্দর রয়েছে এমন জেলার সিভিল
সার্জনদের শনিবার ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের
উপর সজাগ দৃষ্টি ও হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ
নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি
মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়া গেছে এমন দেশে ভ্রমণ করে আসা ব্যক্তিদের সন্দেহজনক রোগী
হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে হবে।
“কারও মধ্যে কোনো লক্ষণ পাওয়া
গেলে কাছের সরকারি হাসপাতাল বা ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনের
ব্যবস্থা করতে হবে।”
মাঙ্কিপক্স ‘নতুন কোনো রোগ নয়’
জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এ ধরনের রোগী পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে
আগেও ধরা পড়েছে। সেখানে এই রোগকে এনডেমিক (সাধারণ রোগ) হিসেবে ধরা হয়। তবে
সম্প্রতি এসব দেশে ভ্রমণের ইতিহাস নেই, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী এমন ব্যক্তিদের
মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে,
এ রোগে আক্রান্তদের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা যায়। মাঙ্কিপক্সের নিশ্চিত রোগী পাওয়া গেছে-
এমন দেশে সম্প্রতি যারা ভ্রমণ করেছেন, অথবা এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ
করেছেন, যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেলে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্সের
রোগী হিসেবে শনাক্ত হলে, সেই রোগীদের মাঙ্কিপক্সের সন্দেহজনক রোগীর তালিকায়
অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সন্দেহজনক এবং লক্ষণযুক্ত
রোগীদের কাছের সরকারি হাসপাতাল বা ঢাকার সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালে আইসোলেশনের
ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ব্যক্তির তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ
শাখা এবং আইইডিসিআরে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন,
পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রলিয়া এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা
জানিয়েছে। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা
যায়নি।
মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ইউরোপে ‘সবচেয়ে বড়’ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ, আক্রান্ত ১শ’ ছাড়িয়েছে
মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে
জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর
দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত
এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়।
এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি
হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জল বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে
উঠলেও দেহে সেই ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে
রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই
ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের
ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর,
কাঠবিড়ালি, এমনকি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস
অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
এই ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যে
কোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।
মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো টিকাও
নেই। তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সঙ্গে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর মিল রয়েছে। ফলে
গুটিবসন্তের টিকা নেওয়া থাকলে তা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধেও ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে
পারে।
যেহেতু এ রোগ সাধারণভাবে প্রাণঘাতী নয়,
তাই এটি নিয়ে উদ্বেগের তেমন কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, “এটা সংক্রামক
রোগ। এ কারণে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। প্রাথমিকভাবে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি
হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রোগী পাওয়া গেলে সেখানে আইসোসেশনে রাখা হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা
জানান, বিমানবন্দরের মেডিকেল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারও মধ্যে উপসর্গ
থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।