সোমবার সদরঘাটের লালকুঠি প্রাঙ্গণে ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’ প্রকল্পের কার্যাবলী সংক্রান্ত প্রদর্শনী পরিদর্শনের পর আলোচনা সভায় বিআইডব্লিওটিএকে এই আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র বলেন, “বুড়িগঙ্গা নদী ঘেঁষে গড়ে ওঠেছে আমাদের ঢাকা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এই ঐতিহাসিক স্থাপনা হতে এখন আর বুড়িগঙ্গা দেখতে পাই না। কারণ সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি দখলদারত্বের ছোবলে নদী আজ দখল হয়ে গেছে।
“তাই, আমি বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ করব, অতিসত্বর আপনারা লালকুঠি হতে রূপলাল হাউজ পর্যন্ত অংশে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরিয়ে ফেলুন। ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে টার্মিনালের এই অংশটি দ্রুত সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিন।”
ঢাকার প্রধান নৌ টার্মিনাল সদরঘাট থেকেই দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের লঞ্চ এবং স্টিমার ছেড়ে যায়। সদরঘাটের যে অংশ থেকে মেয়র টার্মিনাল সরাতে বলেছেন, সেই অংশ থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চ এবং বিআইডব্লিউটিসির স্টিমার ছেড়ে যায়।
নদী তীর সংলগ্ন সড়কে টার্মিনালের বিপরীত পাশেই লাল কুঠি ও রূপলাল হাউজের অবস্থান। ১৮৭৪ সালে ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যারিং নর্থব্রুকের ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই টাউন হলে ১৯২৬ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল।
ঊনবিংশ শতকের রূপলাল হাউজ ইউরোপের রেনেসাঁ যুগের স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। নদীর দিকে সম্মুখভাগে ভবনের চূড়ায় একটি বড় ঘড়ি ছিল, যা ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে।
মেয়র তাপস বলেন, “নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দুঃখজনকভাবে দেখলাম, লালকুঠি আর ঢাকা গেইটই শুধু করপোরেশনের আওতাধীন। রূপলাল হাউজসহ যে সব স্থাপনা ঢাকার অস্তিত্ব সৃষ্টি করেছে, ঢাকাকে পরিচিতি দিয়েছে, সেগুলো করপোরেশনের আওতাধীন নয়।
“তাই রূপলাল হাউজ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় হস্তান্তর করতে আজকের অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্টদের যে দাবি, সেই দাবির সাথে আমিও একাত্মতা পোষণ করছি। রূপলাল হাউজ আমাদেরকে হস্তান্তর করলে আমরা এর পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করব। আমরা ঢাকার সকল ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও স্মৃতিস্তম্ভের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ ও ভুটানের আবাসিক পরিচালক মারসি মিয়াং টেমবন ১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত লালকুঠি এখনও টিকে আছে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং এই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সিটি করপোরেশনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “রূপলাল হাউজ অবৈধ দখলের কবলে রয়েছে। আমি মেয়রকে বলব, তা দখলদারমুক্ত করুন। এসব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে আসুন।”
লালকুঠির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের প্রশংসা করে ইতিহাসের এই শিক্ষক-গবেষক বলেন, “জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি দেখলাম, এটা (লালকুঠি) পরিবর্তন হচ্ছে, আমার মনটা ভরে গেল।”
ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে গুরুত্ব দিয়ে সভায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, “ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আমার শহরে নিয়ে আসতে পারাটা যেমন মর্যাদার, তেমনি পর্যটক আকর্ষণের মাধ্যমে লাভবান হওয়াটা সম্মানেরও।”
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা, বিশ্ব ব্যাংকের সাউথ এশিয়া সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের আঞ্চলিক পরিচালক জন রুম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ সভায় বক্তব্য রাখেন।