প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৭৭ রান।
২৫২ বলে ১৩ চারে ১১৫ রানে ব্যাট করছেন মুশফিক। তার সঙ্গে ৪৬৯ বলে ২৫৩ রানের জুটি উপহার দেওয়া লিটন ২২১ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় খেলছেন ১৩৫ রানে। টেস্টে এটাই তার সর্বোচ্চ, আগের সেরা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছর খেলা ১১৪।
দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য যতটা হতাশার, শেষটা ততটাই আনন্দময়। ৭৮.১ ওভার খেলেও বিচ্ছন্ন হননি মুশফিক ও লিটন। লঙ্কানদের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে প্রথম দিন শেষে এগিয়ে রাখলেন দলকে।
স্বাগতিকদের কাঁপিয়ে দেওয়া দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোকে পরে অনায়াসেই খেলেন দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৪৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার রাজিথা পরে আর ততটা ভীতি ছড়াতে পারেননি। শুরুর স্পেলের পর অকাতরে রান দেন আসিথা। প্রাভিন জয়াবিক্রমা, রমেশ মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার স্পিন রাখতে পারেনি তেমন কোনো প্রভাব।
ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড টস জেতার কথা বলা মাত্রই মুমিনুল হক জানান, ব্যাটিং করবেন। তিনি যত দ্রুত বলেন, তার চেয়েও যেন দ্রুত টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে বাংলাদেশের।
দিনের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান মাহমুদুল হাসান জয়। সবশেষ চার ইনিংসে এটি তার তৃতীয় শূন্য। পরের ওভারে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানও খুলতে পারেননি রানের খাতা।
চাপের মধ্যে থাকা মুমিনুল পথ দেখাতে পারেননি দলকে। দুই চার মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি। টানা ছয় ইনিংসে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ হলেন অধিনায়ক। ব্যাট-প্যাডের মধ্যে বেশ ফাঁক রেখে ড্রাইভ খেলার চেষ্টায় রাজিথার চমৎকার এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
১৩ বছরের বেশি সময় পর সাকিব আল হাসানের গোল্ডেন ডাকে দলের বিপদ আরও বাড়ে।
আগের সিরিজেই ৫৩ ও ৮০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার স্মৃতি এখনও তাজা। কন্ডিশন ও পরিস্থিতি যদিও এক নয়, তবুও ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর এর পুনরাবৃত্তির শঙ্কা অস্বাভাবিক নয়।
তেমন কিছু হয়নি মুশফিক ও লিটনের দৃঢ়তায়। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক শুরু থেকেই খেলেন আস্থার সঙ্গে। কেউই ভোগাতে পারেননি তাকে। তিনিও খেলেননি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ শট। রিভার্স সুইপ তো খেলেনইনি, সুইপও করেন খুব কম।
শুরুতে একটু নড়বড়ে মনে হচ্ছিল লিটনকে। সে সময় প্রায়ই এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় মুশফিককে। অস্বস্তি কাটিয়ে থিতু হয়ে যাওয়ার পর দ্রুত এগোন লিটন। ৪৭ রানে একটি সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। বুকে ব্যথা অনুভব করায় লাঞ্চের ঠিক আগে মাঠ ছেড়ে হাসপাতালে যাওয়া কুসল মেন্ডিসের জায়গায় ফিল্ডিংয়ে নামা কামিন্দু মেন্ডিস নিতে পারেননি ক্যাচ।
বাকি সময়ে আর কোনো সুযোগ দেননি লিটন। ৯৬ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি, এরপর রানের গতি বাড়িয়ে ১৪৯ বলে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম।
অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমার এক ওভারে মারেন তিন চার। শর্ট বলের পরিকল্পনা নিয়ে নামা পেসার আসিথাকে চমৎকার সব পুলে মারেন একের পর এক বাউন্ডারি। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাও আসে তারই ব্যাটে।
নান্দনিক ব্যাটিং ও চোখ ধাঁধানো শটে পাদপ্রদীপের আলো লিটন কেড়ে নিলেও মন দিয়ে নিজের কাজ করে যান মুশফিক। লিটন তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর তার চেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত দেখায় মুশফিককেই।
১১২ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর প্রায় একই গতিতে খেলে ২১৮ বলে মুশফিক স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এক সিরিজে একাধিক সেঞ্চুরির অভিজ্ঞতা এই প্রথম হলো মুশফিকের।
আড়াইশ ছাড়ানো জুটি গড়ার পথে দুটি রেকর্ড নিজেদের করে নিয়েছেন লিটন ও মুশফিক। ২৫ বা এর কম রানে ৫ উইকেট হারানোর পর সেরা জুটি উপহার দিয়েছেন তারা। আগের রেকর্ড জুটি ছিল পাকিস্তানের ওয়ালিস ম্যাথিয়াস ও সুজাউদ্দিনের। ১৯৫৯ সালে ২২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ৮৬ রান যোগ করেছিলেন এই দুই জনে।
পরে ১৫ বছর আগের এক রেকর্ডও ভাঙেন মুশফিক ও রিটন। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পি সারা ওভারে ১৯১ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন মুশফিক ও মোহাম্মদ আশরাফুল। সেটা ছাড়িয়ে ষষ্ঠ উইকেটে দেশকে প্রথম দুইশ রানের জুটি উপহার দেন তারা।
দিনের শেষ বেলায় দ্বিতীয় নতুন বল নেয় শ্রীলঙ্কা। তবে দিনের শুরুর মতো প্রভাব রাখতে পারেননি রাজিথা, আসিথারা। স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৭৭/৫ (জয় ০, তামিম ০, শান্ত ৮, মুমিনুল ৯, মুশফিক ১১৫*, সাকিব ০, লিটন ১৩৫*; রাজিথা ১৯-৫-৪৩-৩, আসিথা ১৭-২-৮০-২, জয়াবিক্রমা ২৯-৯-৮১-০, রমেশ ১২-০-৪১-০, ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৫-০, করুনারত্নে ৪-১-৮-০)।