সেই সঙ্গে বিশিষ্টজন, শিক্ষক, সম্পাদক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে পাওয়া মতামত গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান জানিয়েছেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নতুন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ২৩ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল চার ধাপের সংলাপে শখানেক প্রস্তাব আসে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও অচিরেই সংলাপে বসতে যাচ্ছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান রোববার বলেন, “আমরা সবার মতামত নিচ্ছি, সেই সঙ্গে তাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়নও শুরু করছি। যারা সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন, কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপ তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার, ইভিএমের ব্যবহার করার মত সুপারিশগুলো কমিশন ‘সক্রিয়ভাবে বিবেচনা’ করছে।
“ধাপে ধাপে আরও কাজ শুরু হবে। শিগগিরই ইভিএম নিয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হবে। রাজনৈতিক দলের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও সংলাপ আহ্বান করা হবে।”
এদিকে এ পর্যন্ত সংলাপে পাওয়া সব পরামর্শ পর্যালোচনা করে নিজেদের মতামতও তুলে ধরেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান কমিশনের অবস্থান জানিয়ে একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছেন সংবাদমাধ্যমে। সেখানে ১৬টি পয়েন্টে নাগরিকদের প্রস্তাব এবং ৮টি পয়েন্টে ইসির মতামত জানানো হয়েছে।
কমিশনের অবস্থান
>> নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে কমিশন ‘সাধ্যমত চেষ্টা’ করে যাবে। সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে প্রধান দলগুলোকে ‘অচিরেই’ সংলাপে ডাকা হবে।
>> স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।
>> ইভিএম এর শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ রোধ নিশ্চিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি সভা করেছে। পরীক্ষা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে আগামীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের নিয়ে আরও পর্যালোচনা সভার আয়োজন করা হবে। তারপর কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
>> প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মী সংখ্যা অপ্রতুল হলে একাধিক দিনে কয়েকটি ভাগে ভোটগ্রহণের প্রস্তাব এসেছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এর সম্ভাব্যতা, উপযোগিতা, সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
>> ভোটকেন্দ্রে ও ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশীশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দল ও প্রার্থীকে অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে।
>> নির্বাচনে অর্থশক্তি ও পেশীশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মতৈক্য ও সমঝোতা এ সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে।
>> কারচুপি রোধ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ ফলাফল নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন সম্ভব সব ব্যবস্থা নেবে।
>> ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদিত সাংবাদিকদের এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ নিশ্চিতে কমিশন চেষ্টা করবে।
আরও পড়ুন:
সবাইকে ভোটে আনতে ইসিকে আস্থার সঙ্কট কাটানোর পরামর্শ
‘আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জ’ নতুন ইসির সামনে