মৌসুমজুড়েই লিগে টেবিলে সিটির সঙ্গে লিভারপুলের জমজমাট
লড়াই চলেছে। শেষ পর্যন্ত তা গড়ায় রোববারের শেষ রাউন্ডে।
শেষের নৈপুণ্যে ৩-১ গোলের জয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল নিজেদের
কাজটুকু করেছিল। তাই সিটি নিজেদের ম্যাচে জিততে না পারলে হাতছাড়া হতো শিরোপা, একটা সময় সেই
শঙ্কাও জাগে।
বিবর্ণতা কাটিয়ে ৭৬ থেকে ৮১-এই পাঁচ মিনিটে ইলকাই
গিনদোয়ানের জোড়া ও রদ্রির এক গোলে কিস্তিমাত করে সিটি। লিভারপুলের সঙ্গে ১
পয়েন্টের ব্যবধান ধরে রেখে জিতে নেয় শিরোপা।
২০১২ সালের গল্পেও ছিল দারুণ রোমাঞ্চের দোলা। ছিল
দীর্ঘদিনের না পারার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার স্বস্তি; তৃপ্তি। সেবারও
শেষ রাউন্ডে হয়েছিল লিগের ফয়সালা। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৩-২ গোলে
জিতেছিল সিটি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছিলেন আগুয়েরো,
১৯৬৮ সালের পর লিগ শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল তারা।
আগুয়েরোর গোল এবং সিটির অর্জনকে দলটির সমর্থকরা ’৯৩.২০’-এই নামে ডাকে। ওই গোলের উদযাপনে কদিন আগে আর্জেন্টিনার এই সাবেক
ফরোয়ার্ডের ভাস্কর্যও বসানো হয়েছে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে।
গুয়ার্দিওলার হাত ধরে সিটির এই অর্জনের আলোও কম নয়।
ইপিএলের ইতিহাসে কিংবদন্তি স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের কোচিংয়ে পাঁচ মৌসুমে চারবার
শিরোপা জয়ের কীর্তি এতদিন কেবল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরই ছিল; সেটা তারা গড়েছে
তিনবার। সিটি এই প্রথম করে দেখাল।
স্বাভাবিকভাবে গুয়ার্দিওলার সিটিকে নিয়ে
উচ্ছ্বাস-উন্মাদনার ঢেউ আছড়ে পড়ছে চারদিকে। গণমাধ্যমেও চলছে স্তুতি। এরই ফাঁকে
আগুয়েরোর গোলে আসা সেই অর্জনের সঙ্গে তুলনাও করছেন অনেকে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের ররি স্মিথ যেমন লিখেছেন, “পাঁচ মিনিটের
মধ্যে সিটি তাদের বিবর্ণ রূপকে বদলে ফেলল তরতাজা, তাড়না ও
উন্মাদনায়।”
“এটা পুরোপুরি ১০ বছর আগের শিরোপা নিশ্চিত
করা আগুয়েরোর সেই গোলের মতো নয়, যেটাকে সিটির সমর্থকরা কেবল “৯৩.২০” বলে উল্লেখ করে। কিন্তু এই অর্জন সাদামাটা
কিছুও নয়, কিছু উজ্জ্বলতা এতেও আছে।”
“এবারের সাফল্য (আগুয়েরোর অর্জনের)
সমতুল্যের কাছাকাছি কিছু এবং সেটা ছিল যথেষ্টের চেয়েও বেশি কিছু।”
আগুয়েরোর সেই গোলের চেয়ে সিটির এবারের অর্জনকে এগিয়ে
রাখছেন মার্টিন স্যামুয়েল। ডেইলি মেইলে তিনি তুলে ধরেছেন সিটির ওই পাঁচ মিনিটের মহাকাব্যিক
পারফরম্যান্সের কথা।
“তর্কসাপেক্ষে বলা যায়, ৭৫তম মিনিট পর্যন্ত সিটি এই মৌসুমে তাদের সবচেয়ে নিচু মানের খেলা খেলেছিল,
নিজেদের মাঠে নিশ্চিতভাবেই। এরপর (তারা যেটা করল), তর্কসাপেক্ষে বলা যায় সর্বকালের সেরা ঘুরে দাঁড়ানো। আগুয়েরোর মুহূর্তের
চেয়ে বড় কিছু?”
“সম্ভবত, হ্যাঁ,
কেননা, এবারের পথটা ছিল আরও বেশি কঠিন। ওই
ম্যাচে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স ১০ জনের দলে পরিণত হয়েছিল এবং অবনমন অঞ্চল থেকে
নিরাপদে ছিল। তারা দুর্বল দলও ছিল, যদিও (সিটিকে চ্যালেঞ্জ
জানিয়েছিল)। সে তুলনায় ভিলা বিপজ্জনক এবং নিশ্চিতভাবে তারা চমকে দেওয়ার পথে ছিল।”
ডেইলি টেলিগ্রাফে জ্যাসন বুর্ট তার লেখায় মোটাদাগে তুলে
এনেছেন প্রিমিয়ার লিগের রোমাঞ্চ, উন্মাদনা। সিটির পাগলাটে উদযাপন।
“(তৃতীয় গোলের পর) ১২ মিনিট ২২ সেকেন্ড পর
এটা শেষ হলো, সিটি শিরোপা জিতল এবং এটা ছিল পাগলাটে, পুরাই পাগলাটে ব্যাপার। চারদিক থেকে সমর্থকরা মাঠে ছুটতে থাকল এবং
নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গুয়ার্দিওলা লাফাতে লাগল।”
সিটির এমন প্রাপ্তির মাহেন্দ্রক্ষণে অবশ্য সমালোচনার
আঁচড়ও পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উযাপনের সময় অ্যাস্টন ভিলার গোলরক্ষকের সঙ্গে অসাদাচরণ
করা হয়েছে। সিটি অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওই
সমর্থককে খুঁজে বের করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইতিহাদ স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করার।
টাইমসে হেনরি লিখেছেন সেটাও।