মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে সোমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে নেমে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেন লিটন। ২৪ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর উইকেটে গিয়ে দিন শেষে তিনি অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ১৩৫ রানে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন ২৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
লিটনের এই ইনিংস বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। বিপর্যয়ে দলের ত্রাতা হওয়াও নয় নতুন কিছু। গত দেড় বছর ধরে তিনি অসাধারণ পারফর্ম করে চলেছেন। গত বছরের শুরু থেকে এই টেস্ট পর্যন্ত ১৩ টেস্টে তার রান ১ হাজার ৯৪। সেঞ্চুরি তিনটি, ফিফটি সাতটি। ব্যাটিং গড় ৫৪.৭০।
এই সময়ে ৭৫০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান। পঞ্চাশের বেশি গড় আছে কেবল তামিম ইকবালের (৫২.৩৬)।
ক্যারিয়ারের প্রথম ২৫ টেস্টে লিটনের কোনো সেঞ্চুরিই ছিল না। সেই তিনি ৮ টেস্টের মধ্যে করলেন ৩টি সেঞ্চুরি। এই ৩ সেঞ্চুরি ভিন্ন ৩ মাঠে, আলাদা প্রতিপক্ষের সঙ্গে।
মিরপুরে প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ ডমিঙ্গো শোনালেন লিটনের বদলে যাওয়ার প্রেক্ষাপট।
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেকনিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিটনের খেলা অনেক বিবর্তিত হয়েছে। খুব ভালো ব্যাটিং টেকনিক আয়ত্ত করেছে সে। গত দেড় বছর ধরে টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার খুব ভালো পথ সে খুঁজে নিয়েছে। সে জানে, কখন ঘাম ঝরাতে হবে, কখন নয়। খুব ভালো একটি রুটিন সে অনুসরণ করছে।”
গত দেড় বছরে দারুণ পারফরম্যান্সের এই সময়টায় স্রেফ দুই ইনিংসে তিনি ব্যাট করেছেন পাঁচে। বাকি সব ইনিংসে ছয়-সাতে। এমন ফর্মে থাকা একজন ব্যাটসম্যান, পারফরম্যান্সের বিচারে এখন যিনি দলের সেরা, তাকে প্রায়ই নামতে হচ্ছে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে, চাপ মাথায় নিয়ে। বিশেষ করে, ধুঁকতে থাকা অনেক ব্যাটসম্যান যখন ওপরের দিকে খেলছেন, লিটনের এত নিচে নামাটা প্রশ্নবিদ্ধ বটে।
কোচ ডমিঙ্গো অবশ্য মনে করেন, আপাতত উপযুক্ত পজিশনেই ব্যাট করছেন লিটন।
“নিজের খেলা সে পরের ধাপে নিয়ে গেছে। আমার মনে হয়, ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে থাকাটা তাকে সহায়তা করছে। সামনের সময়ে অবশ্যই সে বাংলাদেশের হয়ে চার বা পাঁচ নম্বরে ব্যাট করবে। ছয়-সাতে খেলতে নামলে, চাপ অনেকটাই সরে যায় তার ওপর থেকে। এখানে নেমে সে অভিপ্রায় দেখাতে পারে, ইতিবাচক ব্যাটিং করতে পারে।”
ফর্ম দুর্দান্ত হলেও লিটন যে এখনও দারুণ কিছু হয়ে যাননি, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন কোচ। ডমিঙ্গোর মতে, বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, বিশ্বসেরাদের মধ্যে আলাদা করে নিজেকে চেনাতে হবে। এখনও অনেক দূর ছুটতে হবে লিটনকে।
“এটা তার স্রেফ তৃতীয় সেঞ্চুরি। এখনও তাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সে দুর্দান্ত ক্রিকেটার, দেখার জন্য দারুণ প্রশান্তিময়। (শট খেলার জন্য) কত সময় তার হাতে… তবে সম্ভাব্য সফল এক টেস্ট ক্যারিয়ারের এখনও কেবল শুরুতে আছে সে। অনেক কাজ করার এখনও বাকি। গত দেড় মাসে সে অনেক কাজ করেছে, তবে তার অধ্যায় এখনই শেষ নয়।”