শেষ
রাউন্ডে রোববার সাস্সুয়োলোর বিপক্ষে অলিভিয়ে জিরুদের জোড়া গোলে ৩-০ ব্যবধানে জিতে, নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্টার
মিলানকে পেছনে ফেলে ১৯তম লিগ শিরোপা জিতেছে এসি মিলান। প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে
পিওলিরও। ১৯ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ৫৬ বছর বয়সী
এই ইতালিয়ান।
তবে
মূল আলোচনায় তো মিলানের সাফল্যই। কিন্তু দলটির কক্ষপথে ফেরার শুরুতে পিওলির ওপর
বিশ্বাস, আস্থা
না রাখলে বিষয়টি অন্যরকমও হতে পারত।
এর
আগে মিলান সবশেষ সেরি আ জিতেছিল ২০১০-১১ মৌসুমে। ১৮তম লিগ শিরোপা জয়ের চার বছর পর
তারা আসর শেষ করে ১০ নম্বরে থেকে। এমনকি ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সাতবার তারা
শীর্ষ চারের বাইরে থেকে লিগ শেষ করে।
২০১৪
সালে মাস্সিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির বিদায়ের পর এবং পিওলি দায়িত্ব নেওয়ার আগে পাঁচ
বছরে ছয় জন কোচ স্থায়ী চুক্তিতে এসে দলটিকে কক্ষপথে ফেরানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ
হন সবাই।
পিওলির
অভিযান শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। মার্কো জামপাওলোর স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তার
কোচিংয়ে প্রথমে দিকে দলের ফলাফল ছিল ভালমন্দের মিশেলে। তবে ২০১৯-২০ মৌসুমে ভালো
করে পরের মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় (ইউরোপা লিগ) ফেরে মিলান।
যদিও
২০২০-২১ মৌসুম শুরুর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, পিওলিকে বিদায় করে লাইপজিগ ও শালকের সাবেক কোচ
রালফ রাংনিককে আনবে ক্লাবটি। তবে ক্লাবের ক্রীড়া পরিচালক ও কিংবদন্তি ফুটবলার
পাওলো মালদিনি আস্থা রাখেন পিওলির ওপর। তার সঙ্গে করা হয় নতুন চুক্তি। রাংনিক
ক্লাবের জন্য ‘সঠিক ব্যক্তি’ নন বলে
মন্তব্য করেছিলেন মালদিনি।
দল
গড়তে মিলান যে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করেছে, তা নয়। সবকিছু সহজভাবে রেখেই দলকে পথে ফিরিয়েছেন
পিওলি। ২০১৯ সালে ধারে মিলানে আসা ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড আন্তে রেবিচ পরের বছর করেন
স্থায়ী চুক্তি। ২০২০-২১ মৌসুমের শুরুতে যোগ দেন ডেনমার্ক অধিনায়ক সিমোন কেয়া। অভিজ্ঞ
স্ট্রাইকার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ তো ছিলেনই।
ওই
মৌসুমে অবশ্য শিরোপা লড়াইয়ে ইন্টার মিলানকে কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি পিওলির
দল। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ১২ পয়েন্ট কম নিয়ে তারা মৌসুম শেষ করে লিগে দুই
নম্বরে থেকে।
২০২১-২২
মৌসুমের শুরুতে তরুণ ডিফেন্ডার ফিকায়ো তোমোরি, মিডফিল্ডার সান্দ্রো তোনালি ও অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার
জিরুদের মতো খেলোয়াড়রা দলে এসে এই মৌসুমে মিলানকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।
খেলোয়াড়
হিসেবে ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটা মিলানে কাটানো মালদিনি ডিএজেডএনকে বললেন, তরুণদের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন
তারা।
“আমরা যে তরুণ খেলোয়াড়দের দলে এনেছিলাম…তাদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলাম।
আমরা ‘রেডিমেইড’ চ্যাম্পিয়ন কিনিনি।”
হাঁটুর
চোটের কারণে মৌসুমের অনেকটা সময় অধিনায়ক সিমোন কেয়াকে পায়নি মিলান। ইব্রাহিমোভিচও
চোটে বাইরে ছিলেন অনেকটা সময়।
গত
এপ্রিলের দারুণ ফর্মে লিগ টেবিলের শীর্ষে ফিরেছিল ইন্টার। তবে পিওলির হাত ধরে
মিলানের এগিয়ে চলা থামেনি। নিজেদের ম্যাচগুলো জিতে প্রতিপক্ষের কাজ কঠিন করে তোলে
তারা। শেষ পর্যন্ত জিতে নিল ট্রফি।
আসরের
শেষ ১৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে লিগ শেষ করেছে মিলান। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, শেষ দিকে তারা চাপে ভেঙে পড়েনি,
হারায়নি পথ। পিওলির মিলানের রাজত্বের বড় বিষয়ও এটি। এমন ধারাবাহিকতা
তার পূর্বসূরিরা খুঁজে পায়নি।
আর
দলকে এমন ধারাবাহিক করে তুলতে সময় লাগে। পিওলির সেই সামর্থ্যও ছিল। মালদিনি তার
পাশে দাঁড়ানোয় কাজটা হয়ে যায় সহজ।
আরাধ্য
লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন সফল হয়েছে। আপাতত এই সাফল্য উপভোগ করতে চান পিওলি।
এরপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চান ইউরোপে সাফল্যের খোঁজে।
“আমরা মিলান, আমরা আবারও ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন
হিসেবে ফিরেছি। পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম স্তরে থাকব আমরা।”
“এখন এই সাফল্য উপভোগ করে যাব। সবার উপভোগ করার অধিকার আছে এটি। এরপর
নিজেদের ইউরোপের সেরাদের সঙ্গে তুলনীয় করে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।”