সোমবার জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত
মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকাপ) ৭৮তম অধিবেশনে তিনি এই
প্রস্তাব রাখেন। অধিবেশনে তার ভিডিও বক্তব্য সম্প্রচার হয়।
শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবে আঞ্চলিক সঙ্কট
ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উন্নত করতে আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি
জ্ঞান ও উদ্ভাবনের জন্য সহযোগিতার সুবিধার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের
শিকার দেশগুলোতে পর্যাপ্ত তহবিল এবং প্রযুক্তি বরাদ্দের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে
একত্রিত হয়ে সহায়তা করারও পরামর্শ দেন তিনি।
উন্নয়নশীলের পথে যেসব দেশ রয়েছে, তাদের
বাস্তবসম্মত উপায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা। আরেক প্রস্তাবে
তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের কথা বলেন, যাতে চতুর্থ
শিল্পবিপ্লব মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যে প্রস্তাবগুলো রেখেছি
সেগুলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে এসকাপ
বিবেচনা করতে পারে এবং অবিলম্বে পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
বিশ্ব যখন কোভিড মহামারীর প্রভাব উত্তরণে
হিমশিম খাচ্ছে, তখন রুশ-ইউক্রেনীয় সংঘাত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার
জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“যুদ্ধে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন
হচ্ছে।”
বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ
থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটি আমাদের পরিকল্পিত
উন্নয়ন যাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতি, যা আমরা গত ১৩ বছর ধরে অনুসরণ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের
মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ
করে যাচ্ছে।
“জনগণই আমাদের উন্নয়ন সাধনার কেন্দ্রবিন্দু, এসডিজিতেও তাই।…আমাদের সরকার ক্ষুধা ও
দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা এসডিজি-১ এবং এসডিজি-২
এর মূল প্রতিপাদ্য।”
মহামারীতে বেশিরভাগ দেশের স্বাস্থ্য
ব্যবস্থা ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দরিদ্র ও
উন্নয়নশীল দেশগুলোর সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মহামারী মোকাবেলা
করার সময় তার সরকার জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।
“আমাদের সময়োপযোগী এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপগুলো সামষ্টিক
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিচালনা করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।”
মহামারীতে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ
নেতিবাচক বা নামমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধি বজায়
রেখেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ২০২১-২২ সালে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা
করছি।”
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ)
চেয়ার হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি
পরিকল্পনা’র খসড়া তৈরি করেছে এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ
জায়গা থেকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ক্রস-বর্ডার
পেপারলেস ট্রেড, এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ
নেটওয়ার্কিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ইউএন এসক্যাপ-এর অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে
সক্রিয়ভাবে জড়িত।
“আমরা এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে এবং অন্যান্য
পদক্ষেপের জন্য ‘এসকাপ’এর উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছি।”
বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয়
দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মানবিক সংকট নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি
সৃষ্টি করেছে।
“আমরা মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের নিরাপদ, টেকসই
ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো আগ্রহ এবং
সক্রিয় সমর্থন আশা করি।”