যেকোনো সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি আস্থা
গড়ে তোলার জন্য সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর বৈবাহিক সম্পর্কে সেই গুরুত্ব কয়েকগুণ
বেশি।
বলা হয়, সত্য কথা যদি কারও মনে আঘাতও
হানে তাও বলে ফেলা উচিত। তবে সেখানেও একটা সীমা আছে।
কঠোর সততার মোড়কে আরেকজন মানুষকে সহজেই
কটাক্ষ করে ফেলা যায়, অপমান করা যায় অবলীলায়।
সহনীয় আর অসহনীয় সততার তফাৎ
নিউ ইয়র্কের ‘নিউরোসাইকোলজিস্ট’ এবং
‘কম্প্রিহেন্ড দ্য মাইন্ড’য়ের পরিচালক সানাম হাফিজ বলেন, “নিজের ভুল-ত্রুটিগুলো কেউ
ধরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা কাজ, যাকে বলছেন সে কীভাবে কথাগুলো
নেবে তা বলা মুশকিল।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে
তিনি পরামর্শ দেন, “এক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রার সততা হবে কোনোরকম কটাক্ষ বা অপমানজনক কথা
বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খোলামেলা আলাপ করা আর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা।”
“এর ফলশ্রুতিতে আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে
আশা করতে পারেন সহানুভূতি। এমনকি সঙ্গীর সঠিক আচরণেও যদি মন খারাপ হয়ে থাকে তারপরও
আপনার সহানুভূতি পাওয়া উচিত, তারপর ঠিক-বেঠিকের বাছ বিচার।”
তিনি আরও বলেন, “আর কারও কোনো নেতিবাচক
দিক নিয়ে সোজাসাপ্টা কথা বলার সময় শব্দচয়নে সাবধান হতে হবে। ভুল ধরানো বা সমালোচনা
নয় বরং সঠিক উপদেশ, অনুপ্রেরণা যোগায় এমন শব্দ বেছে নিতে হবে।”
সম্পর্কে টানাপোড়ন
ডা. হাফিজ বলেন, “কারও দোষত্রুটিগুলো
নগ্নভাবে তার সামনে উপস্থাপন করা হলে ওই ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধে প্রচণ্ড আঘাত লাগবে।
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এই ঘটনা যখন ক্রমাগত ঘটতে থাকে তখন একপক্ষ হয়ে যায় ‘উত্তম’ আর
আরেকপক্ষ ‘অধম’। ফলে দুজন ক্রমেই দুই মেরুর মানুষ হয়ে যেতে থাকেন, বাড়তে থাকে দূরত্ব।”
“যিনি উত্তম তিনি একজন অধমকে জীবনসঙ্গী
হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য মহৎ আর অপরজনের জন্য সাত জন্মের পাপ। পরিস্থিতি যখন এই পর্যায়ে
পৌছায় তখন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আর সমতা থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, “মুখের ওপর হক কথা বলে
দেওয়ার নেপথ্যে, আরেকজনকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতাও দেখা যায়। সম্পর্কে একপক্ষ আরেকপক্ষকে
হেয় করার মাধ্যমে তার আত্মমর্যাদা গুড়িয়ে দেয়, যার পেছনের কারণ হয় সে যাতে সম্পর্ক
ভেঙে যেতে না পারে। এমন পরিস্থিতি আসলে মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে পড়ে। কারণ যিনি এর
শিকার হচ্ছেন তিনি মনে করতে পারেন পৃথিবীতে তার চাইতে তুচ্ছ আর কিছু নেই আর ওই মানুষটা
ছাড়া জীবনে তার কোনো গতি নেই।”
উপায় কী?
সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের
‘এক্সিকিউটিভ ম্যাচ-মেইকিং’য়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুজ্যান ট্রমবেটি বলেন,
“একজন তার কথায় কঠোর সততা প্রকাশ করার পেছনে অসংখ্য কারণ খুঁজে বের করা সম্ভব। অনেক
মানুষ আছেন যারা ছোটবেলা থেকে কটাক্ষ মিশ্রিত সততার বাণী শুনেই বড় হয়েছেন। ফলে পরিণত
বয়সে এসে তারা মনে করেন এটাই স্বাভাবিক আচরণ, অপরজনের মন খারাপ হতে পারে এমনটা তাদের
মাথায়ই আসে না।”
“আবার অনেকেই অন্যের দোষটা সততার মোড়কে
উপস্থাপন করে নিজেকে ভালো প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ এই বৈশিষ্ট্যের ইতিবাচক
ও নেতিবাচক দুটি দিকই আছে।”
এখন কথা হলো যিনি এই নগ্ন সততার শিকার
হচ্ছেন তার মুক্তির উপায় কী?
ডা. হাফিজ বলছেন, “প্রথমত, আপনিও কঠোর
সততার সঙ্গে তাকে জানান যে তার সৎ মন্তব্যগুলো কীভাবে আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা দেয়।
সে যদি না বুঝে বিরূপ মন্তব্য করে থাকে এবং তার মাঝে যদি বিবেকবোধ থাকে তাহলে আপনি
সেদিন থেকেই মুক্তি পেয়ে যাবেন।”
তবে যদি তার পরিবর্তন না হয়, তাহলে নগ্ন
সততার নেপথ্যের কারণগুলো নেতিবাচক ধরে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ওই সম্পর্ক থেকে সরে আসাই
বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আরও পড়ুন