ক্যাটাগরি

সাড়ে ২০ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট অর্থনীতি সমিতির

নতুন অর্থবছরের
জন্য প্রস্তাবিত এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩৪০ শতাংশ বেশি।

রোববার
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিকল্প এ বাজেট তুলে ধরেন সমিতির
সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

এসময় সাধারণ
সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

একযোগে
সরাসরি ও ভার্চুয়াল ব্যবস্থাপনায় এ সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি ও সুধী সমাজের
প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।

অধ্যাপক
বারাকাত মনে করেন আগামী ২০২৭-২৮ অর্থবছর থেকে ৫ মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে
তখন থেকে ঋণ পরিশোধ অবস্থা ‘লাল সংকেতবাহী’ হবে।

বৈশ্বিক
অর্থনীতির মহামন্দা, কভিড-১৯ উদ্ভূত মহাবিপর্যয়, ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এবং
বৈশ্বিক অর্থনীতির ভরকেন্দ্রের ভৌগোলিক স্থানান্তর, এসব কারণে বৈদেশিক ঋণ-উদ্ভূত ‘লাল
সংকেত’ আমাদের সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতিতে অতি বিরূপ প্রভাব ফেলবে মনে করেন তিনি।

বিকল্প
এ বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত এই বাজেটের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ১০
বছর পর বা আগামী ২০৩২ সালের মধ্যে দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে
রূপান্তর করা অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ধরা হয়েছে।”

এছাড়াও
বৈষম্য, বহুমুখী দারিদ্র্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, দেশজ অর্থনীতিকে উন্নয়নকৌশলে
সর্বোচ্চ গুরুত্ব, কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের
কৌশল রয়েছে রয়েছে তার প্রস্তাবনায়।

এসময় তিনি
নিম্মবিত্ত মানুষকে মধ্যআয়ে উন্নীত করাকে প্রধান লক্ষ্য ধরে ৩৩৮টি সুপারিশ প্রস্তাব
করেন।

এছাড়া গবেষণা
ও গণপরিবহন নামে দুটি নতুন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করেন।

বিশাল এ
বিকল্প বাজেটের মধ্যে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ
মোট বাজেট বরাদ্দের ৯১ দশমিক ২ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয় বলে অধ্যাপক বারাকাত
উল্লেখ করেন।

বাকি ৮
দশমিক ৭ শতাংশ বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা হবে বাজেট ঘাটতি।

বিকল্প
বাজেটের প্রস্তাবে তিনি খাত, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অনুযায়ী বরাদ্দ তুলে ধরেন। নতুন কিছু
বিভাগ তৈরির প্রস্তাবও করেন তিনি। 

বিকল্প বাজেটের আয়

২০২১-২২
অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। আর আগামী
বাজেটে ওই আয় ৪ দশমিক ৭৬ গুণ বৃদ্ধি করে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা
ধরা হয়েছে বিকল্প বাজেটে।

আবুল বারকাত
বলেন, চলতি বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আমাদের
প্রস্তাবনায় এই আয় ৩ দশমিক ৬৩ গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ কোটি টাকায়।

চলতি বাজেটে
‘আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর’ থেকে বাজেটে ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
এই খাতে আমরা ৫ দশমিক ১০ গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এ উপখাত থেকে আয় হবে ৫ লাখ ৩৫ হাজার
৫০০ কোটি টাকা।

‘মূল্য
সংযোজন কর’ খাতে চলতি বাজেটের টার্গেট রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। বিকল্প
বাজেট প্রস্তাবে এ খাত থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বারকাত
বলেন, প্রচলিত ছকের বাইরে বেরিয়ে নতুন কিছু উৎস থেকে আয়ের প্রস্তাব করেছি। যেমন বিদেশি
নাগরিকদের ওপর ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কর; সেবা থেকে প্রাপ্ত কর ৬ হাজার কোটি টাকা;
বিমান পরিবহণ ও ভ্রমণ কর ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন,
আয়ের নতুন দুটি উৎস হচ্ছে- সম্পদ কর এবং অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর। সম্পদ কর থেকে ২
লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা আহরণের
প্রস্তাব করা হয় এতে।

জাতীয় রাজস্ব
বোর্ড বর্হিভূত কর’ হিসেবে খাতে চলতি বাজেটের নির্ধারিত ১৬ হাজার কোটি টাকা ৮ দশমিক
৪৮ গুণ বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন তিনি।

বিকল্প
বাজেটে বার্ষিক প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার গুরুত্ব দিয়ে
তিনি কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

মূল্যস্ফীতি
এমন কোনো পর্যায়ে নেওয়া যাবে না, যা অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতির মহা-ঘূর্ণনচক্রে ফেলবে।
তা হলে বিপদ হবে অনিবার্য। ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি’ কোনো অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না, মনে
করেন তিনি।