দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৯ ওভারে ৩৫৩/৯ |
অল্পের জন্য রানআউট হলেন না ইবাদত
১০৯তম ওভারের শেষ বলটি লেগ সাইডে করেন কাসুন রাজিথা। বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি কিপার। এই সুযোগে দুই রান নেওয়ার চেষ্টা চালান মুশফিকুর রহিম ও ইবাদত হোসেন।
দ্বিতীয় রানের সময় অল্পের জন্য রানআউট হতে বেঁচে যান ইবাদত। ফাইন লেগ থেকে করা থ্রো হাতে জমাতে পারেননি স্টাম্পের গোঁড়ায় থাকা লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। তার হাতের সামনে থেকে বল লাফিয়ে ওঠে।
ঝাঁপিয়ে পড়ে দাগের ভেতরে ঢোকেন ইবাদত। স্টাম্পে বল লাগলে তার এই প্রচেষ্টা ব্যর্থই হতো।
রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন ইবাদত
মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলেই ফিরতে পারতেন ইবাদত হোসেন। আঙুলও তুলে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান রানের খাতা খুলতে না পারা ইবাদত।
আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সার তার ব্যাট ঘেঁষে যায় কিপারের হাতে। শ্রীলঙ্কার আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন ইবাদত।
রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্পর্শ করেনি ব্যাট। টিকে গিয়ে আসিথার আরও চার বল কাটিয়ে দিয়ে কোনোমতে ওভারটি শেষ করেন ইবাদত।
শূন্যতে শেষ খালেদ
তাইজুল ইসলামকে ফেরানোর পরের ওভারে এসেই সৈয়দ খালেদ আহমেদের শিকার ধরলেন আসিথা ফার্নান্দো। রানের খাতা খুলতে পারলেন না বাংলাদেশের দশ নম্বর ব্যাটসম্যান।
আসিথার বাউন্সারে খালেদের ব্যাটের কানা নিয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে।
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে উইকেটে আছেন ইবাদত হোসেন।
বাউন্সারে ফিরলেন তাইজুল
চট্টগ্রাম টেস্টের মতো মিরপুরেও বাউন্সারে ফিরলেন তাইজুল ইসলাম। এবারও বোলার সেই আসিথা ফার্নান্দো।
১০৬তম ওভারের পঞ্চম বলটি শরীর তাক করে শর্ট করেন আসিথা। খেলবেন না ছেড়ে দেবেন দ্বিধায় ছিলেন তাইজুল। শেষ মুহূর্তে তার গ্লাভস ছুঁয়ে বল জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে।
প্রথম টেস্টে অবশ্য একই ধরনের বলে শট খেলেন তাইজুল। ব্যাটে-বলে ঠিকমতো করতে না পেরে ধরা পড়েন ফাইন লেগে।
এদিন মুশফিকুর রহিমকে ভালোই সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন তাইজুল। ৩৭ বলে ২ চারে ১৫ রান করা এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ৪৯ রানের জুটি।
উইকেটে মুশফিকের সঙ্গী সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
মুশফিকের ১৫০
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর চাপ ভার করছে না মুশফিকুর রহিমকে। উল্টো রান তোলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। পৌঁছে গেলেন তিনি ১৫০ রানে, ২৯১ বলে।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের পঞ্চম দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেললেন দ্বিতীয়বার।
দেড়শ ছাড়ানো আগের চার ইনিংসের তিনটিতেই দুইশ ছুঁয়েছিলেন মুশফিক।
প্রথম দিন যখন ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দল, দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে লিটন কুমার দাসকে নিয়ে গড়েন দৃঢ় প্রতিরোধ। দুইজনেই সেঞ্চুরি করে এগিয়ে নেন দলকে, গড়েন রেকর্ড জুটি।
লিটন ফিরে গেলেও মুশফিক দলকে টানছেন এখনও। খেলছেন ২৯৩ বলে ১৫২ রানে। তার সঙ্গী তাইজুল ইসলামের রান ৮।
বাংলাদেশের তিনশ
আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেন মুশফিকুর রহিম। তাতে দলীয় তিনশ রানে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ।
৯৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেট হারিয়ে ৩০৩। মুশফিক খেলছেন ১৩১ রানে, তাইজুল ইসলামের রান ২।
ওভারটির পরই পানি-পানের বিরতিতে যায় দুই দল। প্রথম ঘণ্টায় ১২ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় দিনের শুরুটা খারাপ ছিল না স্বাগতিকদের। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান দেখেশুনে খেলে কাটিয়ে দেন প্রথম আধা ঘণ্টা।
কিন্তু একটু পরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে খেলায় ফেরান কাসুন রাজিথা।
চার বলের মধ্যে এই পেসার ফিরিয়ে দেন ১৪১ রান করা লিটন কুমার দাস ও রানের খাতা খুলতে না পারা মোসাদ্দেক হোসেনকে।
রাজিথার পাঁচ উইকেট
প্রথম টেস্টে বিশ্ব ফার্নান্দোর কনকাশন সাব হিসেবে খেলে বল হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন কাসুন রাজিথা। সেই পারফরম্যান্সে মিরপুর টেস্টে জায়গা করে নেন শুরুর একাদশেই।
চট্টগ্রামে এক ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৬০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার। ১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে যা ছিল তার সেরা বোলিং।
একাদশ টেস্ট এসে রাজিথা ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। প্রথম দিন নিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হোক ও সাকিব আল হাসানের উইকেট।
এবার চার বলের মধ্যে লিটন দাস ও মোসাদ্দেক হোসেনকে বিদায় করে ক্যারিয়ারে প্রথমবার পেলেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ।
এক ওভারেই ফিরলেন লিটন-মোসাদ্দেক
বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের জুটি। কিন্তু ওভারে জোড়া শিকার ধরে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দিলেন কাসুন রাজিথা। চার বলের মধ্যে এই পেসার ফিরিয়ে দিলেন লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেনকে।
দেখেশুনে প্রথম আধঘণ্টা সাবধানী ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে দিলেও নিজের ইনিংস বেশিদূর টেনে নিতে পারলেন না লিটন। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন এই কিপার ব্যাটসম্যান।
৯৩ ওভারের প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের ওপর লেংথে করেন রাজিথা। হালকা ভেতরে ঢোকা বল লিটনের ব্যাটের বাইরের কানা নিয়ে যায় দ্বিতীয় স্লিপে। নিচু ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় মুঠোয় জমান কুসল মেন্ডিস।
ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রান করা লিটনের বিদায় ভাঙল ৫১৩ বল স্থায়ী ২৭২ রানের রেকর্ড জুটি। ২৪৬ বল খেলা কিপার-ব্যাটসম্যান লিটনের ইনিংসটি সাজানো ১৬ চার ও এক ছক্কায়।
তিন বছর পর টেস্ট দল ফেরা মোসাদ্দেক ফিরে গেলেন দুই বল পরই। সুইং করে বেরিয়ে যাওয়া বল খোঁচা দিয়ে শূন্য রানে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়লেন তিনি।
এই সাফল্যের সঙ্গে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন রাজিথা।
উইকেটে মুশফিকের সঙ্গী তাইজুল ইসলাম।
শুরুতে সাবধানী মুশফিক-লিটন
কোচের চাওয়া মতোই দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন লিটন কুমার দাস ও মুশফিকুর রহিম। সাবধানী ব্যাটিংয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন শুরুর কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আগের দিনের প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশকে বেশ ভোগানো শ্রীলঙ্কান দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দো এদিনও করছেন দারুণ বোলিং। তাদেরকে দেখেশুনে খেলেই মুশফিক-লিটন পার করছেন চ্যালেঞ্জিং সময়।
প্রথম আধ ঘণ্টায় চোখে পড়েছে অসমান বাউন্স। দুয়েকটা বল বেশ লাফিয়েছে, কয়েকটা বল হুট করে নিচু হয়ে হয়ে গেছে।
৯১ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯৫। লিটন খেলছেন ১৪০ রানে, মুশফিকের রান ১২৬।
মাহমুদউল্লাহকে ছাড়িয়ে লিটন
চার বছর আগে মাহমুদউল্লাহর গড়া রেকর্ড নিজের করে নিলেন লিটন দাস। সাত নম্বরে নেমে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এখন এই কিপার-ব্যাটসম্যানের।
দলের বিপর্যয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরা লিটন খেলছেন ১৩৭ রানে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ করেছিলেন ১৩৬ রান।
বাংলাদেশের হয়ে সাতে নেমে সেঞ্চুরি আছে আর কেবল দুইজনের। ২০১০ সালে মুশফিকুর রহিম ভারতের বিপক্ষে করেন ১০১ রান। তিন বছর পর লঙ্কানদের বিপক্ষে নাসির হোসেন খেলেন ঠিক ১০০ রানে ইনিংস।
মাঠে ফিরেছেন কুসল মেন্ডিস
বুকের ব্যথা নিয়ে প্রথম দিন লাঞ্চের আগে মাঠ ছাড়া কুসল মেন্ডিস দ্বিতীয় দিনের সকালেই মাঠে ফিরেছেন। লঙ্কান এই ক্রিকেটার দ্বিতীয় স্লিপে ফিল্ডিংয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আগের দিন ২৩তম ওভারে হুট করে বসে পড়েন কুসল মেন্ডিস। দৌড়ে আসেন শ্রীলঙ্কা দলের ফিজিও। পরে পরীক্ষার জন্য সরাসরি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকদের কক্ষে। প্রায় পুরোটা সময় এক হাতে বুক চেপে ধরেছিলেন কুসল মেন্ডিস।
পরে অধিকতর পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। কুসল মেন্ডিসের জায়গায় ফিল্ডিং করেন কামিন্দু মেন্ডিস।
দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কা কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেন, সতর্কতার অংশ হিসেবে হাসপাতালে রাখা হয়েছে কুসলকে।
প্রথম ঘণ্টায় চোখ বাংলাদেশের
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন প্রথম ঘণ্টায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাংলাদেশ দল। স্রেফ ৭ ওভারের মধ্যে হারিয়ে বসে ৫ উইকেট। মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্বস্তিতে দিন শেষ করে তারা। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে এমন কোনো ধস চায় না দল।
প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর চাওয়া, মঙ্গলবার প্রথম ঘন্টার কঠিন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান লিটন ও মুশফিক।
৫ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে মুমিনুল হকের দল।
২৫২ বলে ১৩ চারে ১১৫ রানে ব্যাট করছেন মুশফিক। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে লিটন খেলছেন ২২১ বলে ১৬ চার ও এক ছক্কায় ১৩৫ রানে।
দুইজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৪৬৯ বলে রেকর্ড ২৫৩ রানের। ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে দুইশ ছাড়ানো জুটি এটাই প্রথম।
দুঃস্বপ্নের শুরুর পর স্বপ্নের মতো দিন পার করা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দিন দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা। তাই থিতু দুই ব্যাটসম্যান লিটন-মুশফিককে কঠিন সময় কাটিয়ে শক্ত ভিত গড়ে দিতে বললেন ডমিঙ্গো।
প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৭৭/৫ (মুশফিক ১১৫*, লিটন ১৩৫*; রাজিথা ১৯-৫-৪৩-৩, আসিথা ১৭-২-৮০-২, জয়াবিক্রমা ২৯-৯-৮১-০, রমেশ ১২-০-৪১-০, ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৫-০, করুনারত্নে ৪-১-৮-০)।