রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রিয়াজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাজারে এবার মওসুমের শুরু থেকেই গমের কেজি ৩৪ টাকার উপরে। আর সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য ২৮ টাকা। তাই কৃষকরা আমাদের গম না দিয়ে খোলা বাজারেই বিক্রি করছে।”
একই পরিস্থিতি পাশের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার টন।
ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম জানান, মওসুমের শুরুতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের দিন দুই উপজেলায় আনুষ্ঠানিকতার জন্য ২ টন করে মোট ৪ টন গম জমা পড়ে। এরপর আর কোনো গম সংগ্রহ করা যায়নি।
কারণ জানতে চাইলে তিনিও বাজারে বেশি দামকে দেখান। “বর্তমান পরিস্থিতিতে গম সংগ্রহ করার কোনো বাস্তবতা নেই,” বলেন তিনি।
বিভিন্ন রেশন কার্যক্রমের চাহিদা মেটাতে সরকার আমদানির পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদক থেকে গম সংগ্রহ করে থাকে।
এবার সিলেট ও বরিশাল বিভাগকে বাদ রেখে ১ লাখ ৪৭ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
প্রায় দুই মাস গড়ানোর পর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই পর্যন্ত ২৩ টন গম সংগ্রহের তথ্য রয়েছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
রংপুর বিভাগে ৪৪ হাজার ৩৯৯ টন সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হলেও সেখানে দুটি জেলায় সংগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায়। আর হাতে আছে সময় মাত্র এক মাস।
কোভিড মহামারীর মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে গমের দাম চড়া; তার মধ্যে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে তা আরও চড়ে যায়।
ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের কারণ হতে পারে: জাতিসংঘ
ভারত রপ্তানি বন্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেড়েছে গমের দাম
গম রপ্তানি: ভারত কতদিন বন্ধ রাখবে বুঝতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা
তার আঁচে দেশের বাজারেও লাগায় বাজারে গমের দাম বেড়ে গেছে বলে কৃষকরা সরকারির চেয়ে বেসরকারি ক্রেতাদের কাছেই বিক্রি করতে আগ্রহী।
বর্তমানে দেশে গমের বার্ষিক চাহিদা ৭০ লাখ টনের মতো, বিপরীতে উৎপাদন হয় ১২ লাখ টনের মতো। ফলে বাকি গম আমদানি করতে হয়।
আর চাহিদা মেটাতে সরকার গম মজুদ করে রাখে। সেই কারণে প্রতিবছর কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মতো এবারও এপ্রিলের শুরু থেকে গম সংগ্রহ শুরু হয়। সংগ্রহ শেষ হবে ৩০ জুনের মধ্যে।
চলতি ২০২২ সালে সিলেট ও বরিশাল বিভাগকে বাদ রেখে ১ লাখ ৪৭ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার।
এর মধ্যে রংপুর বিভাগে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৪ টন গম উৎপাদন বিবেচনায় ৪৪ হাজার ৩৯৯ টন, রাজশাহী বিভাগে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৭ টন উৎপদনের বিপরীতে ৬০ হাজার ৩৮ টন, ঢাকা বিভাগে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৭২ টন উৎপাদনের বিপরীতে ২০ হাজার ৯৯৫ টন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ হাজার ৭৯২ টন উৎপাদনের বিপরীতে ৩ হাজার ১৮৪ টন, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ টন উৎপাদনের বিপরীতে ১৭ হাজার ৭৭৫ টন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ হাজার ১২০ টন উৎপাদনের বিপরীতে ৮৪৫ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
গত বছর সিলেট ও বরিশাল বিভাগ থেকে কোনো গম সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য অধিদপ্তর। তাতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমস্যা না হওয়ায় এবার দুই বিভাগের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়নি।
খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংগ্রহের গতিপ্রকৃতি দেখে আমরা ধরে নিচ্ছি এবার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।”
তিনি বলেন, “তবে আমরা কখনই অভ্যন্তরীণ উৎসের উপর নির্ভরশীল ছিলাম না। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত গমের ন্যায্য মূল্য পায়, সেজন্যই খাদ্য অধিদপ্তর প্রতিবছর এক লাখ টন গম সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে থাকে। এবার যেহেতু খোলা বাজারে গমের দাম বেশি তাই কৃষক আর খাদ্য অধিদপ্তরে গম বিক্রি করছে না।”
বিভিন্ন রেশন কাজের জন্য প্রতি বছর ছয় থেকে সাত লাখ টন গম সংগ্রহ ও বিতরণ করে থাকে সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের পর বিদেশ থেকে বাকি গম কেনা হয়।
এবার বিশ্ববাজারে সঙ্কট দেখা দেওয়ায় আমদানি করা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাখাওয়াত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববাজারে গমের দাম বেড়ে গেলেও সরকারি সংগ্রহ কাজে কোনো সঙ্কট নেই।
“চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ টন (সব মিলিয়ে) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আমরা টার্গেট বাড়িয়ে সাত লাখ টন গম সংগ্রহ করেছি। ইউক্রেইন রাশিয়ার বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সর্বশেষ ভারতের কাছ থেকে দুই লাখ টন গম কেনা হয়েছে, যা এখন দেশের পথে আছে।”
গত ১৯ মের মজুদ পরিস্থিতি অনুযায়ী, খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামে এখন মোট ১১ লাখ ৪২ হাজার টন শস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল ১০ লাখ ৩৯ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ১ হাজার টন।