নানা নাটকীয়তার পর গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। তারপর থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবিতে তার সমর্থকরা নানা সময়ে মিছিল-সমাবশে করছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এবার ইমরান তার সমর্থকদের ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রা করার এবং দেশটির নতুন সরকারকে বিলুপ্ত করে জাতীয় নির্বাচনের পরবর্তী তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ইমরানের ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার তার হাজারো সমর্থক উত্তরপশ্চিমের নগরী পেশওয়ার থেকে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে ইসলামাবাদ অভিমুখে রওয়ানা করে। একটি ট্রাকের ওপর ইমরান নিজে ওই মিছিলের নেতৃত্ব দেন।
এদিকে, ইমরানের রাজধানী অভিমুখে যাত্রার ঘোষণার পর ইসলামাবাদে ঢোকা ও বের হওয়ার সব রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বুধবার পার্লামেন্ট ভবন, সরকারি অফিস-আদালত, দূতাবাসসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও বন্ধ রাখা হয়।
গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডে পড়া পাঞ্জাব প্রদেশের অন্যান্য বড় বড় নগরীগুলোর প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথও এদিন বন্ধ রাখা হয় বলে জানান কর্মকর্তারা।
‘‘কোনো আবরোধ আমাদের থামাতে পারবে না”, মিছিল শুরুর পর সমর্থকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন ইমরান।
পরে এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘পার্লামেন্ট বিলুপ্ত এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরা ইসলামাবাদে অবস্থান করবো।”
শাহবাজ শরিফ সরকার ইমরানের এই মিছিলকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেছে, তিনি ‘অসৎ উদ্দেশে’ ইসলামাবাদে আন্দোলন শুরুর চক্রান্ত করছেন।
ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতিতে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ
স্থানীয় নানা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে পুলিশের সঙ্গে ইমরানের সমর্থকদের মারামারি করতে দেয়া যায়। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। কোথাও কোথাও তাদের গাড়ির জানালা ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং সমর্থকদের ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়।
সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের বেশিরভাগ ঘটনা পাঞ্জাব প্রদেশে ঘটেছে। তবে সংঘর্ষে কেউ গুরুতর আহত হননি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আমজাদ মালিক।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন, পুলিশ ইমরানের সমর্থকদের বাড়ি, অফিস এবং মিছিল মিলিয়ে মোট ৪,৪১৭ জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৭শ মানুষকে আটক করেছে।
পরে অবশ্য তাদের মধ্যে ২৫০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইমরানের মিছিল আটকাতে মঙ্গলবার রাত থেকেই পুরো পাঞ্জাব প্রদেশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়। রাত থেকে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী সড়কে টহল দিতে শুরু করে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, বাতিল হয় পরীক্ষা।
প্রদেশের বড় বড় নগরীতে জনজীবন থমকে গিয়েছিল।
ইমরান খান বলেছিলেন, তার রাজধানী ঘেরাও মিছিলে ২০ লাখের বেশি মানুষ অংশ নেবে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর দাবি, মাত্র কয়েক হাজার মানুষ ওই মিছিলে অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাউকে সমাবেশ করার বা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। কিন্তু আমরা কাউকে সমাজে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার বীজ বপন করতে দিতেও পারি না।”
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, তার সরকার অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
তিনি ইমরানের দিকে অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘‘আপনি আমাদের হাতে একটি ডুবতে থাকা অর্থনীতি তুলে দিয়েছেন এবং এখন আপনি অবস্থান ধর্মঘট ও প্রতিবাদের পরিকল্পনা করছেন।
‘‘আমরা এই দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছি।”