তাদের ক্ষুধায় কাতর
মা মাসখানেক
আগে যমজ
এই দুই
বোনের জন্ম
দিয়েছিলেন; তারও ৮ সপ্তাহ আগে
দারিদ্র্যের কশাঘাতে নিষ্পেষিত পরিবারটি সোমালিয়ার
দোলো শহরে
উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য বানানো একটি
শিবিরে এসে
হাজির হয়েছিল।
“ও অপুষ্টিতে ভুগছিল,
আর তার
দুই সন্তান
ক্ষুধায় মরল,”
বলেন কাক্সারি
উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া আব্দুল্লাহি।
জানুয়ারিতে মাথা তোলা
এ শিবিরটিতে
এখন ১৩
হাজার মানুষের
বাস বলে
জানিয়েছে বার্তা
সংস্থা রয়টার্স।
বেঁচে থাকার জন্য
সোমালিয়ার যে ৬০ লাখেরও বেশি
মানুষের এখনই
সাহায্য প্রয়োজন,
তাদের মধ্যে
আব্দুল্লাহি ও তার পরিবারের সদস্যরাও
আছে।
টানা ৪ মৌসুমে
বৃষ্টি না
হওয়া এবং
৪০ বছরের
মধ্যে সবচেয়ে
ভয়াবহ খরা
তাদের মটরশুটি
ও ভুট্টাগুলো
কুঁকড়ে ফেলেছিল,
খটখটে জমিতে
পড়ে আছে
পালিত ছাগল
ও গাধার
মৃতদেহ।
বিশ্ববাসীর মনোযোগ এখন
ইউক্রেইনের দিকে থাকলেও বিভিন্ন দাতা
সংস্থা ও
জাতিসংঘ সোমালিয়ার
এ বিপর্যয়কর
পরিস্থিতির দিকে নজর ফেরানোর মরিয়া
চেষ্টা করছে।
এই বিপর্যয় এমনই
এক রূপ
নিচ্ছে যার
সঙ্গে কেবল
সোমালিয়ার ২০১১ সালের দুর্ভিক্ষেরই তুলনা
হতে পারে,
বলছে তারা।
ওই দুর্ভিক্ষে দেশটির
আড়াই লাখেরও
বেশি মানুষ
প্রাণ হারিয়েছিল,
যাদের মধ্যে
বেশিরভাগই ছিল ৫ বছরের কম
বয়সী শিশু।
কর্তৃপক্ষের হাতে এখন
কেবল কাক্সারি
শিবিরের অর্ধেকের
মতো বাসিন্দার
জন্য অর্থ
আছে, আব্দুল্লাহির
পরিবার ওই
ভাগ্যবানদের তালিকায় পড়েনি।
গত শতকের ৯০
দশকের শুরুর
দিকের পর
এমনটা আর
কখনোই দেখেননি
আব্দুল্লাহি। তার আগে তার
পরিবারকে কখনো
নিজেদের জমি
ছাড়তে হয়নি,
বলেছেন আব্দুল্লাহি।
সেসময় একটি দুর্ভিক্ষ
সোমালিয়ায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ডেকে
এনেছিল, যার
শেষ হয়েছিল
একটি ব্ল্যাক
হক হেলিকপ্টার
ভূপাতিত হওয়ার
মধ্য দিয়ে।
ভালো দিনগুলোতে, আব্দুল্লাহি
শহরে কাপড়
ধুয়ে দেড়
ডলারের মতো
আয় করে
১৩ সদস্যের
পরিবারকে সাহায্য
করতে পারেন। এতে
প্রত্যেকেই এক মুঠো করে ভুট্টার
পোরিজ খেতে
পারে।
অবশ্য এটাও যথেষ্ট
নয়।
তার ছেলে
বউয়ের টাইফয়েডের
ওষুধ দরকার,
যার দাম
আব্দুল্লাহির দৈনিক মজুরির ১০ গুণ।
মেয়েটি একটি কম্বলের
ওপর অন্যমনস্ক
হয়ে শুয়ে
আছে, হাড়
জিরজিরে এক
শিশু তার
স্তন চুষেই
যাচ্ছে।
কৃত্রিম পাথরে
মোড়ানো লাল
রংয়ের একটি
হাই হিল
জুতা কাছাকাছি
ময়লায় পড়ে
আছে, এটি
সেই অল্প
কয়েকটি জিনিসের
একটি, যা
মেয়েটি তাদের
বাড়ি থেকে
নিয়ে এসেছিল। এখন
সে এতটাই
দুর্বল যে
নিজের নামটাও
বলতে পারছে
না।
“আবদাইয়া,” আব্দুল্লাহি নাম
ধরে ডেকে
তার নজর
কাড়ার চেষ্টা
করেন; কিন্তু
মেয়েটি ফিরেও
তাকায় না।
রয়টার্স জানিয়েছে, সোমালিয়ার
ছয় অঞ্চলে
দুর্ভিক্ষ ঠেকাবার জন্য যত শিগগির
সম্ভব হস্তক্ষেপ
জরুরি হয়ে
পড়েছে।
কিন্তু এই
জরুরি সহায়তার
জন্য দরকার
অর্থ ।
জাতিসংঘ দেশটিতে যে
জরুরি সাহায্য
দেওয়ার পরিকল্পনা
করেছে তার
মাত্র ১৫
শতাংশ অর্থ
জোগাড় করা
গেছে।
এখন পর্যন্ত
২৮ লাখ
মানুষ সহায়তা
পেয়েছে, আরও
অর্থ মিললে
বাকি ৩১
লাখকে সাহায্য
করা যাবে।
দেশে দেশে খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বাড়াচ্ছে উদ্বেগ
নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ইউক্রেইন থেকে খাদ্যশস্য বের করতে দেয়া হবে: রাশিয়া
এর বাইরে যারা
আছে তাদের
কাছে পৌঁছানোর
উপায় নেই;
তারা তপ্ত
ও অত্যন্ত
শুষ্ক এলাকায়
বসবাস করছেন,
যেখানে আল
শাবাব বিদ্রোহীদের আধিপত্য।
“দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি এড়াতে
আমাদের অর্থের
দরকার,” বলেছেন
উত্তর আফ্রিকায়
বিশ্ব খাদ্য
কর্মসূচির উপপরিচালক রুকিয়া ইয়াকুব।
কাক্সারি উদ্বাস্তু শিবিরে
লোকজন ঘর
বানিয়েছে লাঠির
কাঠামোর ওপর
কমলা রঙের
তেরপল, প্লাস্টিক
ও টুকরো
কাপড় দিয়ে।
লোহার শিট দিয়ে
টয়লেট বানাতে
ত্রাণকর্মীদের কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ির প্রতিধ্বনি
শোনা যাচ্ছে। ঝাঁকে
ঝাঁকে আসা
মানুষ তাঁবুগুলোর
আশপাশে ভিড়
করলে ত্রাণকর্মীরা
তাদের জন্য
এখন কোনো
সাহায্য নেই
বলে জানাচ্ছেন।
সাহায্যের বদলে অনেক
পরিবারকে এখন
এক মুঠো
খাবার বা
অল্প কয়েকটা
পয়সার জন্য
ভিক্ষা চাইতে
হচ্ছে তাদের
কাছে, যারা
তুলনামূলক ভালো, আগেভাগে এসে যারা
সাহায্যের জন্য নিবন্ধন করতে পেরেছিল।
ক্ষুধা শিশুদেরকে দুর্বল
করে দিলে
রোগ তাদের
শরীরে জেঁকে
বসে।
২৫ বছর
বয়সী আশা
আলি ওসমান
মাসখানেক আগে
হামে তিন
ও চার
বছর বয়সী
দুই সন্তানকে
হারিয়েছেন।
এখন তিনি
তার সবচেয়ে
ছোট সন্তানকে
টিকা দেওয়ার
চেষ্টায় আছেন।
“আমার খুব কষ্ট
হয় কারণ
আমি তাকে
বুকের দুধও
থাওয়াতে পারি
না।
যখন আমার
শিশুরা ক্ষুধার্ত
থাকে তখন
মাঝেমাঝে আমি
এক প্রতিবেশীর
কাছ থেকে
সামান্য চিনিগুলানো
পানি চেয়ে
নিয়ে আসতে
পারি।
কিংবা কখনও
কখনও আমরা
একসঙ্গে শুয়ে
থাকি আর
কাঁদি,” বলেছেন
তিনি।