‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন
অফ আমেরিকা’র তথ্য মতে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর প্রায় চার কোটি মানুষ ‘অ্যাংজাইটি
ডিজঅর্ডার’য়ে আক্রান্ত হয়। এতো মানুষ যে সমস্যায় ভোগে তাকে সাধারণ ভেবে অবহেলা করা
মোটেই উচিত হবে না।
বরং যে কারণে এই সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো
জেনে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
‘পারফর্ম্যান্স সাইকোলজিস্ট’ ড. হেইলি
পার্লেস কাজ করেন পেশাজীবী খেলোয়াড় ও ব্যায়ামবীরদের নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো’র এই মনো-চিকিৎসকের
কাজ হলো মানসিক পরিস্থিতির কারণে একজন মানুষ যে কাজে দক্ষ সেই কাজটাই ভালোভাবে করতে
না পারার সমস্যার সমাধান করা।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে
তিনি জানিয়েছেন কীভাবে কাজ সম্পর্কিত মানসিক চাপ তৈরি হয় আর সেখান থেকে উত্তরণের উপায়।
বসের ভয়
ড. পার্লেস বলেন, “অফিসের কাজ যদি বসের
ভয়ের ভরসায় চলে, তবে সেই কর্মক্ষেত্র দ্রুত কর্মীদলের কর্মশক্তি নিঃশেষ করে দেবে। এই
ধরনের বস দ্রুত রেগে যায়, সমাধান নয় বরং সমস্যার দিকেই তাদের মনযোগ বেশি, প্রচুর অভিযোগ
করেন এবং ক্রমাগত কর্মীদের বিভিন্ন হুমকি দেন।”
এমন পরিস্থিতিতে যারা কাজ করেন তাদের
মানসিক স্বাস্তি না থাকাই স্বাভাবিক। উপরন্তু এই আচরণকে অত্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করা
যায়।
তিনি আরও বলেন, “চাকরিটা যদি খুব প্রয়োজন
না হয় তবে এই পরিস্থিতিতে কাজ না করে বরং প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগে অভিযোগ তুলে
ইস্তফা দিতে পারেন। আর যদি চাকরিটা খুবই দরকার হয় তবে আপনাকে একটি দলের প্রধান হওয়া
পন করতে হবে।”
“হয়ত আপনি নিজেই নিজের বস হতে পারবেন
না তবে একটা বড় পদ যদি পান, যেখানে আপনার অনুগত কিছু কর্মী আছে, তবে সেই আত্মতৃপ্তি
আপনার মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হবে।”
সহকর্মীদের বাঁকা চোখ
ড. পার্লেস বলেন, “সমালোচনা, পরনিন্দা,
সহকর্মীদের বিপদে ফেলা, আড়ালে আরেকজনের ক্ষতি করা, দোষ খোঁজা ইত্যাদি নোংরা বিষয় দেখা
যায় কিছু কর্মক্ষেত্রে। যদি বুঝতে পারেন সহকর্মীরা আড়ালে আপনাকে নিয়ে কৌতুক করে, ক্ষতি
করার চেষ্টা করে, বাঁকা চোখে তাকায় তবে কাজের পুরো সময়টাই আপনি একটা মানসিক আতঙ্কে
থাকবেন।”
“কিংবা হয়ত আপনাকে নিয়ে হচ্ছে না, অন্য
কাউকে নিয়ে তা হচ্ছে এবং আপনি সেখানে উপস্থিত, সেটাই আপনাকে মানসিক চাপে ফেলবে।”
এক্ষেত্রে করণীয় হল যদি আপনার কাজ ঠিক
থাকে তবে শুধু তাদের দিকেই মনযোগ দিন যাদের সঙ্গে আপনার কাজের জন্য যোগাযোগ করতে হয়।
আর যখনই অন্য কারও সম্পর্কে গালগল্প হচ্ছে এমনটা শুনবেন, ভদ্রতার সঙ্গে ওই স্থান ত্যাগ
করতে হবে।
যন্ত্র কাজ করছে না
বর্তমান সময়ে প্রায় সব ধরনের কাজেই কোনো
না কোনো যন্ত্রের ব্যবহার আছে। আর কাজের সময় এমন কোনো যন্ত্র যদি ঠিকভাবে কাজ না করে
তবে মানসিক অস্বস্তি, বিরক্তি, রাগ সবই একসঙ্গে ভর করে।
আর যখন কোনো কাজের তাড়া থাকে তখনই যেন
এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়।
এই পরিস্থিতির ওপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ
নেই। বৈদ্যুতিক যন্ত্র নষ্ট হতেই পারে। যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তা হল আপনার
মন মেজাজ।
নিজেকে শান্ত করার পদ্ধতি আয়ত্ব করতে
হবে। কোথাও বসে লম্বা দম নিন, কোনো কাজ না জড়িয়ে নিজেকে শান্ত হওয়ার জন্য কয়েক মিনিট
সময় দিন। এবার বিকল্প সমাধান নিয়ে ভাবুন।
জনসম্মুখে বক্তব্য দেওয়া
বন্ধুদের সামনে যতই কথার খই ফুটুক না
কেনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুটো কথা বলতে গেলে হাঁটু সবারই কাঁপে। এই মঞ্চভীতি মানসিক চাপ
সৃষ্টি করে।
আবার কর্মক্ষেত্রে বক্তব্য দেওয়া বা কোনো
তথ্য উপস্থাপন করাও সহজ কিছু নয়। এর জন্য তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করে সেগুলোকে উপস্থাপনযোগ্য
করতে হয়। সেটাও প্রচণ্ড মানসিক চাপে রাখে কর্মীদের।
এই কাজটাকে হুমকি হিসেবে নয়, ‘চ্যালেঞ্জ’
হিসেবে দেখার চেষ্টা করুন। ভয় পেলে মানসিকভাবে মুষড়ে পড়বেন, তবে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে
নিলে দেখবেন নিজের সবচাইতে ভালোটা বেরিয়ে আসবে।
অনুশীলন করতে হবে প্রচুর, যুক্তিযুক্ত
তথ্য উপাত্ত যোগাড় করতে হবে। আপনার তথ্য যদি নিখাঁদ হয় তবে নিজের মনে একটা আত্মবিশ্বাস
তৈরি হবে।
দীর্ঘযাত্রা
প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য যদি
আপনাকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় তবে স্বভাবতই আপনাকে অনেক আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এতে
ঘুম কম হবে, আর ঘুম শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তাই ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ যদি না থাকে
তবে যাত্রাপথে শিক্ষণীয় কিংবা বিনোদনমূলক কিছু করার চেষ্টা করুন। যেমন- গান শোনা, শিক্ষণীয়
ভিডিও দেখা, বই পড়া, মজার কোনো অনুষ্ঠান দেখা ইত্যাদি।
খবরে অনেক নেতিবাচক ঘটনা থাকে, তাই যাত্রাপথে
তা জানার চেষ্টা না করলেই ভালো।
কাজের সুবাদে বেড়ানো
নিজের পছন্দের কোনো স্থানে বেড়াতে যাওয়া
নিঃসন্দেহে মজার ব্যাপার। তবে কাজের প্রয়োজনে অন্য শহর কিংবা দেশের বাইরে যাওয়াটা সবার
মনে রোমাঞ্চ জাগায় না। বরং সময় মতো পৌঁছানো, কাজ শেষ হবে কি-না, যানবাহন কেমন হবে,
থাকব কোথায়, ফিরবো কবে, আবহাওয়া কেমন ইত্যাদি নানান দুশ্চিন্তায় মন বিচলিত হয়ে পড়ে।
পুরো বিষয়টাই আসলে মানসিক।
কাজের প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে বলেই বিষয়টাকে
আপনি রোমাঞ্চকর হিসেবে দেখছেন না, উপভোগ করছেন না।
হয়ত কোনো পর্যটন কেন্দ্রে যাচ্ছেন না
তবে সবখানেই নতুন কিছু উপভোগ করার আছে, বেড়ানোর জায়গা আছে।
কাজের ফাঁকে সেখানে যান। মোটকথা, কাজের
সুবাদের কোথাও যাওয়ার ব্যাপারটাকে উপভোগ করুন।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জন
‘টার্গেট-বেইজড’ চাকরি শুনলেই মনটা খারাপ
হয়ে যায়। কারণ সেই ‘টার্গেট’ বা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে চাকরি অনিশ্চয়তা
পড়তে পারে, কাটা যেতে পারে বেতনের অংশ। আর প্রচণ্ড পরিশ্রম করার পরও যদি লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনে ব্যর্থ হন, বেতন কাটা যায় কিংবা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কটু কথা শুনতে হয়, তবে মনবল
একেবারে গুঁড়িয়ে যায়।
এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু হবে তা
নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকলে এমন মাত্রা বেছে নিন যা আপনার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব। এতে
করে আপনি আত্মতুষ্টি পাবেন, যা আপনার মনবল বাড়াবে। ফলে পরে আরও বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন
করা সম্ভব হবে।
তবে খুব সহজ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও
সমস্যা আছে। তখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পরও আপনি তৃপ্তি পাবেন না। কারণ আপনি তো জানেন
যে আপনার ক্ষমতার চাইতে কম কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন
মানসিক চাপ অদ্ভূত প্রভাব ফেলে শরীরে